ছবি-সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভয়ংকর ফাঁদ পাতা বেনজির হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।
বেনজির মূলত ফেসবুকে ভুয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করতেন। এরপর সেই প্রোফাইল ব্যবহার করে তিনি নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করতেন। তিনি ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে এসেছেন বছরের পর বছর।
নেটফ্লিক্সের টিন্ডার সুইন্ডল ডকুমেন্টারি ড্রামার মতোই ছিল তার প্রতারণার ধরণ। বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক। গ্রেফতারকৃত বেনজির হোসেনের পূর্ববর্তী রেকর্ডে দেখা গেছে, তিনি পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, রোমান্স স্ক্যাম, ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম, সেনাবাহিনী ও পুলিশে চাকরির স্ক্যাম, হুন্ডি ব্যাবসা, মানব পাচারসহ নানা ধরণের প্রতারণামূলক অপরাধ কর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, শাহিদ হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি বিমান চালকের প্রোফাইল নকল করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বেনজির। ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তিনি নিয়মিত প্রকৃত শাহিদ হাসানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন।
তিনি আরও জানান, ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ, পরে বিয়ের আশ্বাস ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন বেনজির।
অডিও কলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বললেও ভিডিও কলে নানান অজুহাতে কথা বলতেন না। এরপর অনলাইন প্রণয়ের এক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেয়া বিভিন্ন নগদ নম্বরে নিয়ে ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ নম্বরের বিষয়ে জানা গেছে। এরমধ্যে ১৩টি নগদ নম্বরে গত ৪ মাসে এক কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নিজের বাড়ি নড়াইলে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও ক্যাশ আউট করতেন তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলায় বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে।
তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ নম্বরের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত এনআইডি অন্য ব্যক্তির নামে। ক্যাশ আউট করার সময় পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পরে থাকতেন। এমনই একজন ভুক্তভোগী স্বপ্না (ছদ্মনাম) একজন সিঙ্গেল মাদার।
প্রতারণার স্বীকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নম্বরে প্রতি মাসে ১৪/১৫ লাখ করে টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। একই সময় অপর একজন ভুক্তভোগী জান্নাত (ছদ্মনাম) খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। বেনজির হোসেনের স্মার্ট ফোনে ৫০ জনের বেশি ভুক্তভোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে’, যোগ করেন সিটিটিসি প্রধান।
আরো পড়ুন: সড়কে গণপরিবহন পর্যাপ্ত, নেই কোনো ভোগান্তি
স্বপ্না রাজধানীর ওয়ারী থানায় প্রতারণার বিষয়ে ২১শে নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। এরপর বুধবার (২২শে নভেম্বর) ছায়া তদন্তে নেমে প্রযুক্তি সহায়তায় বেনজির হোসেনকে শনাক্ত করে খুলনার ফুলতলায় নগদ নম্বর থেকে ক্যাশ আউটের সময় হাতেনাতে ধরা হয়।
গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে Shahid Hasan (Pilot Officer) ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগড-ইন অবস্থায় একটি স্মার্ট ফোন এবং ক্যাশ আউটের কাজে ব্যবহৃত একটি বাটন ফোন, ৪টি নগদ অ্যাকাউন্ট সংবলিত সিম জব্দ করা হয়।জব্দকৃত স্মার্ট ফোনে ৫০ জনের অধিক ভুক্তভোগীর সন্ধান পাওয়া যায়।
এসি/ আই.কে.জে/