ছবি : সংগৃহীত
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় এ বছর ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। ফেনী জেলায় বন্যা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যাদুর্গত হয়েছে এ সব এলাকা। ভারতে ত্রিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যার কারণেই বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানবতার পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশের মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি,বরং আরো বেশি করে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।
স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন সর্বস্তরের মানুষ। ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট নিয়ে বন্যার্ত মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছেন। এ ছাড়া উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
এবারের বন্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠনসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বানভাসিদের সাহায্যার্থে ফান্ড সংগ্রহ করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ দিচ্ছেন। এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখা যায়নি।
বন্যাকে সামনে রেখে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সম্প্রীতির এক নতুন নজির সৃষ্টি করেছেন। দুর্গোৎসব আয়োজনের বাজেট থেকে বন্যাদুর্গতদের অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি মন্দির কমিটি। এমন নজির অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।
সরকারি চাকরিজীবীরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে এক দিনের বেতনভাতা দিয়েছেন। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনীর সব পর্যায়ের সদস্যরাও। এ ছাড়া আরও সরকারি, বেসরকারি অফিস এবং স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গঠন করা হয়েছে ত্রাণ তহবিল। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ফ্রি টকটাইম এবং ইন্টারনেট সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাইরেও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে, অলি-গলিতে শিক্ষার্থীরা ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করছেন। তারা সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন। সে এক অভিনব দৃশ্য! মানবতার সেবায় দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে পুরো বাংলাদেশ।
আই.কে.জে/