ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় মাহবুবের বাড়ি। বাবা ব্যবসায়ী। পরিবারে আছেন আরো দুই ভাই ও এক বোন। ছোট ভাই পড়ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বোন স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এমন অবস্থায় নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করতে হচ্ছে মাহবুবকেই। এ জন্য তিনি দিয়েছেন দোকান। তার দোকানে বিক্রি হয় পিঁয়াজু, খিচুড়ি, নুডুলস, বিরানি ও চাওমিন। রেস্টুরেন্ট থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই দোকান ভাড়াসহ তার পড়ার খরচ চলে।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্র মাহবুব মুর্শেদ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশতম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের খরচ চালাতে গড়ে তুলেছেন রেস্টুরেন্ট। দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। এরপর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সময় দেন রেস্টুরেন্টে।
বিকেলে রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশনের ফাঁকে মাহবুব মুর্শেদ বলেন, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রজেক্টে কাজ শুরু করি। কিন্তু দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে বাড়ি চলে যাই। করোনা শেষের দিকে রংপুরে আসি। তখন কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো আমি রান্না ভালো পারি। এ চিন্তা থেকেই রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা করি।
শুরুটা সহজ ছিল না। দেশে করোনা তখনো শেষ হয়নি। তখন সাহস করে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে রেস্টুরেন্ট শুরু করলাম। আস্তে আস্তে ক্রেতারাও আসতে থাকলো। সে সময় রাস্তা সংস্কারে আমার দোকানটিও ভাঙ্গা পড়লো। আবারো বিপদে পড়লাম। অনেকদিন পর ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে খাবার বিক্রি শুরু করি। চেষ্টা করি সাধ্যের মধ্যে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করার। মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবারের অর্ডারও নিয়ে থাকি। নিজে খাবার তৈরিসহ পরিবেশনের কাজ করি। তাই আমার খরচও কম। এ দোকানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, স্থানীয় ও রংপুর শহরের লোকজনও খেতে আসেন।
তিনি বলেন, অল্পকিছুদিনের মধ্যে বড় জায়গায় রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানেও অল্প দামে ভালো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। এখন বেশি আইটেম করতে পারছি না। কিন্তু সে দোকানে অনেক আইটেমের খাবার থাকবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট টাইম কাজ করার সুযোগ থাকবে।
আরো পড়ুন: পথ হারালেন ৩১ দর্শনার্থী, উদ্ধার করল পুলিশ
দোকানে খাবার খেতে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া আক্তার মনি বলেন, আমার আজকে জন্মদিন ছিল। তাই আমরা কয়েকজন বন্ধুরা মিলে মাহবুবের দোকানে খাওয়াদাওয়া করি। তার হাতের রান্না যথেষ্ট ভালো। দোকানে খাবারগুলো অন্যান্য দোকানের থেকে অনেক কম দাম। তাই প্রায়ই এ দোকানে খেতে আসি।
দোকানে নুডুলস খাচ্ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র রুশাইদ আহমেদ। তিনি বলেন, এ দোকানটির পাশে আমাদের কোচিং। বন্ধুরা মিলে সন্ধ্যায় এখানে নাস্তা করতে আসি। এ দোকানের খাবার অনেক সুস্বাদু। আর এখন তো আমরা মাহবুব ভাইয়ের ফ্যান হয়ে গেছি।
বেরোবি শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, এ দোকানের বিরানি এবং খিচুড়ি অনেক ভালো লাগে। জুনিয়রদের নবীনবরণে বিরিয়ানি অর্ডার দেয়া হয়েছিল। সকলে তার দোকানের খাবারের প্রশংসা করেছে।
এসি/ আই. কে. জে/