রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিনিময় : ছবি - সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ই আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদ গত ৩১শে আগস্ট মতবিনিময় করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এর আগে গত ১২ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি, ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, শাহ আলমের নেতৃত্বে সিপিবি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে গণতন্ত্র মঞ্চ, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বে বিজেপি, মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করীমের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু দলের সাথে আলাদা আলাদাভাবে মতবিনিময় করেছিলেন।
প্রথম দফায় যে সব দল বাদ পড়েছিল, দ্বিতীয় দফায় সে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দ্বিতীয় দফায় মতবিনিময় সভায় মামুনুল হকের নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামি আন্দোলনসহ সাতটি দলের সাথে আলাদাভাবে মতবিনিময় করেন। এছাড়া জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, কর্নেল (অব:) অলি আহমেদের নেতৃত্বে এলডিপি, নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে জাসদ, ১২ দলীয় জোটসহ বেশ কয়েকটি দল অংশগ্রহণ করে। তবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট ও তাদের সমমনা দলগুলোকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
উপদেষ্টা পরিষদের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বেশকিছু প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। সভায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গণফোরাম ২১ দফা, এলডিপি ৮৩ দফা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৩ দফা এবং খেলাফত মজলিস ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এছাড়া অন্যান্য দলগুলোও লিখিতভাবে দাবি পেশ করেছে। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, দুই মেয়াদের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান চালু, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে ভোটের হারের ভিত্তিতে আসন বন্টন,৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা।
অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই চাচ্ছে আগে সংস্কার তারপর নির্বাচন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। প্রধান উপদেষ্টাও সেটাই মনে করেন। তিনি মতবিনিময় সভায় দলগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সংস্কারে যতটুকু সময় প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি সময় তারা থাকবেন না। ভয়ভীতিহীন পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করাই তার সরকারের প্রধান কাজ।
সরকারের চাওয়া আর রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ নেই। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে উপদেষ্টা পরিষদের যত বেশি সংলাপ হবে ততই আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে। সংলাপেই বের হবে সংস্কারের দ্বার।
আই.কে.জে/