ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে গত পাঁচ দিন ধরে (বুধবার থেকে রোববার) উত্তেজনা বিরাজ করছে। সড়ক অবরোধ চলার সময় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপেরও ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।
এর মধ্যেই খাগড়াছড়ি সদরের পাশের উপজেলা গুইমারা বাজারে আগুন দেওয়া ও সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৮শে সেপ্টেম্বর) গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হন সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশসহ অন্তত ২০ জন।
খাগড়াছড়ি জেলা শহর এখন থমথমে। সব দোকানপাট বন্ধ। লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। তবে পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে জুম্ম ছাত্র-জনতা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধসহ তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে রোববার ঘোষণা দিয়েছে। জুম্ম ছাত্র-জনতা নামের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা বিবৃতিতে তা জানানো হয়। এতে তারা আট দফা দাবি দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে স্কুলছাত্রী কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবার মামলার পর জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম শয়ন শীল (২১)। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
পরদিন বুধবার থেকে জুম্ম ছাত্র-জনতা ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে। তাদের ডাকে বৃহস্পতিবার আধা বেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে শুক্রবার নারী নিপীড়নবিরোধী সমাবেশ পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার কোনো কর্মসূচি ছিল না। তবে পরদিন শনিবার সকাল–সন্ধ্যা অবরোধ ডাকা হয়। সেদিন সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অবরোধকারীদের সঙ্গে স্থানীয় একটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
তখন উভয় পক্ষের চারজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলেও বিকেল চারটার দিকে শহরের মহাজনপাড়া এলাকায় আবারও সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় মহাজনপাড়া, নারকেলবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাটে ভাঙচুর চালানো হয়। সেদিনে দুপুর সাড়ে ১২টার থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদরের চারটি স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন শনিবার বেলা দুইটার পর সদর, পৌর এলাকা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে অবরোধ চলাকালে রোববার বেলা একটার দিকে গুইমারার রামেসু বাজারে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। এ সময় বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে।
বাজারে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে আগুনে বাজারের দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকানমালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে।
এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছিল টহল। এর আগে দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অবরোধের সমর্থনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়।
খবরটি শেয়ার করুন