রবিবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ মহালয়া : দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩৪ অপরাহ্ন, ২রা অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে শারদীয় দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড় উৎসব। কালের পরিক্রমায় দুর্গাপূজা সার্বজনীনতায় রূপ নিয়েছে। মহালয়া থেকে দুর্গতনাশিনী দুর্গার আগমনী বার্তা। এই দিনে দেবী দুর্গার পৃথিবীতে আগমন ঘটে। মহালয়া থেকেই দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়। মহালয়ার ছয় দিন পর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের অভিলাষ নিয়ে অকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। শরৎকালে অর্থাৎ অকালে অসময়ে দেবীর পূজা করেছিলেন বলে শারদীয় দুর্গাপূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়। এছাড়া মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার বোধন বা জাগরণ হয়। তাই মহালয়ার পর দেবীপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার সূচনা করা হয়।

শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস দক্ষিণায়ন দেবতাদের ঘুমের কাল। তাই বোধন করে এই সময় দেবতাদের জাগ্রত করা হয়। মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয়, সে সময় সংকল্প করে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু হয়, একে কল্পরম্ভা বলে। যদিও ষষ্ঠী থেকে পূজার প্রধান কার্যক্রম শুরু হয়।

পুরাণে বলা হয়েছে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধ করার দায়িত্ব পেয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত কোনো দেবতার পক্ষে মহিষাসুরকে বধ করা সম্ভব ছিল না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিশ্বর হওয়ার আশায় একে একে দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে। তখন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব এই ত্রয়ী শক্তি বাধ্য হয়ে মহামায়া রূপে এক নারী শক্তি সৃষ্টি করলেন। তিনি দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। দেবতাদের দান করা দশটি অস্ত্র দশ হাতে নিয়ে মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত এবং হত্যা করেন। মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণের সময়টি মহালয়া হিসেবে উদযাপন করা হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে, মহালয়ার দিন চন্ডী পাঠের মধ্যদিয়ে দেবীর আগমন বার্তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। এইদিনই মহিষাসুরকে বধ করে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে, শুভ শক্তির বিজয় হয়।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, মহালয়া হচ্ছে একটি অমাবস্যা তিথি। এই তিথিতে সাধারণত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ তর্পণ করা হয়। এই দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষেরা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আমাদের আশীর্বাদ প্রদান করেন। শাস্ত্রমতে, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করে। পিতৃলোকের শাসক হলো মৃত্যু দেবতা যম। মহালয়া তিন পুরুষের আত্মার শান্তির জন্য একটি বিশেষ দিন। তাদের আত্মার শান্তি কামনায় গঙ্গায় জল ও তিল দিতে হয়। মহালয়া আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহালয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

আই.কে.জে/

শুভ মহালয়া

খবরটি শেয়ার করুন