ছবি : সংগৃহীত
“আমার রাজকুমার তার রাজকুমারী পেয়ে গেছে” দিলীপ কুমারকে উদ্দেশ করে খুব কষ্ট নিয়ে বলেছিলেন মধুবালা।
হাজারো পুরুষের কাঙ্ক্ষিত নারী ছিলেন মধুবালা। আর তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষ ছিলেন দিলীপ কুমার। প্রেমও করেছেন দুজন দীর্ঘ ৯ বছর।
মধুবালার সৌন্দর্য, মায়াবী হাসি, দাপুটে ব্যক্তিত্ব আর সংবেদনশীল অভিনয়ে মুগ্ধ ছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। এমনকি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টুও তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে তিনি ভালোবেসেছেন তার রাজকুমারকে। ১৯৫১ সালে ‘তারানা’ ছবির সেটে শুরু মধুবালা-দিলীপের প্রেম। কিন্তু তাদের ভালোবাসা পরিণতি পায়নি। এর কারণ, মধুবালার বাবা চাননি উনার মেয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে করুক। কিন্তু দিলীপ কুমার চেয়েছেন তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে। একদিন দিলীপ কুমার মধুবালাকে তার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাকে বিয়ে করতে বলেন কিন্তু মধুবালা রাজি হননি। দিলীপ কুমার প্রচন্ড রেগে সেখান থেকে চলে যান। এখান থেকেই তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এই দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পায় যখন বিআর চোপড়া তার নতুন ছবি ‘নয়া দৌড়’ এর শ্যুটিং শুরু করেন, তখন।
ছবির শ্যুটিংয়ের কথা ছিল গোয়ালিয়ারে কিন্তু নায়িকার বাবা আতাউল্লা খান মধুবালাকে গোয়ালিয়ারে যেতে বাধা দেন। তিনি চেয়েছিলেন শ্যুটিং দিল্লিতে হোক। তাই মধুবালা গোয়ালিয়ারে না পৌঁছালে বিআর চোপড়া কোর্টে মামলা দায়ের করেন অভিনেত্রী ও তার বাবার নামে। সেই মামলায় মধুবালা ও তার বাবার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেন দিলীপ কুমার। এখানেই সম্পর্কটা ভেঙে যায়। এরপরও মধুবালা তার বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন দিলীপ কুমারকে। কিন্তু দিলীপ কুমার রাজি হননি। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে ‘মুঘল-এ-আজম' ছবির শ্যুটিং শুরু হয়। ছবিতে একটি দৃশ্যে সেলিম আনারকলির গালে চড় মারার দৃশ্য আসে। সেই দৃশ্যে দিলীপ কুমার মধুবালাকে সত্যি সত্যি চড় মেরে সেট থেকে বেরিয়ে যান। এরপর দিলীপ কুমারের ওপর অভিমান করেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা।
আরো পড়ুন : হাসপাতালের বাইরে পা রাখলেই লোকেরা মনে করে আমি অন্তঃসত্ত্বা: সোনাক্ষী সিনহা
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কিশোর কুমারের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। মধুবালা মাত্র ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। অথচ এই অল্প সময়েই হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন ছাপ রেখে গেছেন মধুবালা, যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাকে জায়গা দিয়েছে মনের মনিকোঠায়। ১৯৩৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে জন্মেছিলেন মমতাজ জাহান বেগম দেহলভী ওরফে মধুবালা।
মধুবালার বোন মধু ভূষণ সম্প্রতি মুখ খুলেছেন দিদির সঙ্গে প্রয়াত অভিনেতা দিলীপ কুমারের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে। মৃত্যুশয্যায় থাকা মধুবালাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রেমিক দিলীপ কুমার। দীর্ঘ ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল দুজনের, তবে পরিণতি পায়নি সেই প্রেম।
মধু ভূষণ ইটি টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘মধুবালা কোনোদিন ওকে (দিলীপ কুমার) ভুলতে পারেনি। উনি ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালেও এসেছিলেন, যখন দিদি এক্কেবারে মৃত্যুশয্যায় ছিল। দিলীপ কুমার ওঁকে আশ্বাস দিচ্ছিল ওরা ফের একসঙ্গে কাজ করবেন। তখনও উনি বিয়ে করেননি। ওঁনার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ওরা কোনোদিন সাক্ষাৎ করেননি’। মধুবালার বিয়ের দুই বছর পরে দিলীপ কুমার বিয়ে করেন। বিয়ের কথা শুনে মধুবালা বলেন- “আমার রাজকুমার তার রাজকুমারী পেয়ে গেছে”।
মধুবালার মৃত্যুর পর কবরস্থানে ছুটে এসেছিলেন দিলীপ কুমার। শেষবারের মতো দেখা হয়নি দুজনের। দিলীপ কুমারের পরিবারও মধুবালাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে করবস্থানে এসেছিল বলে জানান নায়িকার বোন।
হার্টের অসুখ ছিল মধুবালার। ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। এর মাঝেই কিশোর কুমারের বিয়ের প্রস্তাবে সায় দিয়ে গোপনে বিয়ে করেন তিনি। এরপর লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে আর করার কিছু ছিল না। বছর কয়েকের মধ্যেই শয্যাশায়ী হয়ে যান তিনি, কিশোর কুমারের সঙ্গে তার দাম্পত্যও সুখের হয়নি। বিয়ের মাস কয়েকের মধ্যেই আলাদা থাকতে শুরু করেন দুজনে। অসুস্থ মধুবালাকে নার্সদের দায়িত্বে রেখে দিয়েছিলেন কিশোর কুমার। ভাঙা প্রেম, অসুখী দাম্পত্য জীবনের বোঝা নিয়ে ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি না-ফেরার দেশে পারি দেন বলিউডের সর্বকালের সেরা ‘সুন্দরী’ মধুবালা।
এস/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন