ছবি: সংগৃহীত
মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিকে ঘিরে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহর অশান্ত হয়ে উঠেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার (১৭ই মার্চ) রাতে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ পরিস্থিতির সূচনা হয় সম্ভাজি নগরকে কেন্দ্র করে। এ জেলার আগের নাম ছিল আওরঙ্গবাদ। বর্তমান নাম ছত্রপতি শিবাজির জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্ভাজির নামে, সম্ভাজি নগর। সেখানেই খুলদাবাদ এলাকায় রয়েছে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেই সমাধি সেখান থেকে সরানোর দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি সেই দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। সোমবার নাগপুর শহরের মহল অঞ্চলে এ দাবিতে বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা জমায়েত করেন। সেই জমায়েতে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি ও সবুজ কাপড়ে ঢাকা এক প্রতীকী কবরে আগুনও লাগানো হয়।
ওই অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ও দোকানে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও আক্রান্ত হয়। ওই হাঙ্গামায় অন্তত ২৫ জন পুলিশ কর্মী আহত হন। আহত হন অনেক সাধারণ মানুষও। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র সিংঘল এনডিটিভিকে জানান, শহরের মোট ১১টি থানা এলাকায় সোমবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে সোমবার রাতেই শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে।
আওরঙ্গজেবের হাতে সম্ভাজি মহারাজের মৃত্যু হয়েছিল। সম্ভাজির জীবন-কাহিনি নিয়ে সম্প্রতি এক হিন্দি সিনেমা তৈরি হয়েছে, ‘ছাভা’। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেই সিনেমা। তাতে আওরঙ্গজেবের চরিত্রায়ণ মহারাষ্ট্রের অনেক মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এ ভাবাবেগ হাতিয়ার করে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আওরঙ্গজেবের সমাধি রাজ্য থেকে সরানোর পুরোনো দাবি নতুন করে তুলতে থাকে। তারা সমাধিক্ষেত্র গুঁড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচিও গ্রহণ করে। সে জন্য খুলদাবাদ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়।
অভিযান রুখতে জেলা প্রশাসন শনিবার (১৫ই মার্চ) থেকে ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাদের জেলায় ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেয়। নাগপুর শহরের বিক্ষোভ মিছিল ছিল তারই প্রতিবাদ। বজরঙ্গ দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনও সেই আন্দোলনের পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছিল।
সমাধি সরানোর দাবি ঘিরে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত। এই রাজ্যে বিজেপি তার দুই জোট শরিকের সঙ্গে ক্ষমতাসীন। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ নাগপুরের মানুষ। জনগণকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, নাগপুর শান্তির জায়গা। নাগপুরবাসী সর্বদা মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। জনতা যেন শান্তি স্থাপনে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন