ছবি: সংগৃহীত
কোরবানির ঈদের পর পাবনার গরুর হাটগুলোতে বাছুর কেনা-বেচার মহোৎসব চলছে। বছর ঘুরলে সেগুলো লাখ টাকার সম্পদে পরিণত হবে—এ আশায় বাছুর কিনছেন খামারি ও ক্ষুদ্র চাষিরা। তবে খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে লাভের সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারপরও বাছুর কেনায় ভাটা পড়েনি। কারণ হিসেবে ক্ষুদ্র চাষিরা বলছেন, গো-খাদ্যের টাকা যাবে দিনে দিনে আর বছর শেষে একবারে টাকাটা হাতে আসবে, এটাই লাভ।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, জেলাজুড়ে ঈদ পরবর্তী এ মৌসুমে অন্তত অর্ধলাখ বাছুর কেনা-বেচা হবে। তাদের মতে, কাঁচা ঘাস ও মোলাসেস খাওয়ালে উৎপাদন খরচ কমবে। চাষিরা যদি তাদের পরামর্শ মোতাবেক বাছুর লালন-পালন করেন তাহলে সবাই লাভের মুখ দেখবেন।
খামারি ও ক্ষুদ্র চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে বাছুর কিনে মোটাতাজাকরণ করে অনেক লাভবান হওয়া যেত। কিন্তু গো-খাদ্য ও ওষুধের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এখন বাছুর লালন-পালন করে লাভ থাকছে না। তারা জানান, এক দশক আগেও ২০ হাজার টাকায় একটি বাছুর পাওয়া যেত। বছর শেষে তা ৮০ হাজার বা ক্ষেত্রবিশেষে লাখ টাকায় বিক্রি করা যেত। এতে ক্ষুদ্র-মাঝারি বা বড় সব শ্রেণির গো-খামারিদের লাভবান হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন একটি ষাঁড় বা গাভির বাছুর কিনতে হচ্ছে ৫০-৭০ হাজার টাকায়। উন্নত জাত হলে তা লাখ টাকা দিয়েও কিনতে হচ্ছে। এতে ওই সব বাছুরের পেছনে যে খরচ হয় তাতে বছর শেষে যে দামে বিক্রি হয় তাতে আর লাভ থাকে না।
খামারি ও ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের পালন করা ষাঁড় সাধারণত কোরবানির ঈদের আগে বিক্রি করেন।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের সাকড়েগাড়ি এলাকার লাবণী আক্তার লাভলী জানান, ২০১৩ সালে তার স্বামী আনোয়ারুল ইসলাম ঈশ্বরদীর অরণকোলা থেকে দুটি এঁড়ে বাছুর মাত্র ১২ হাজার টাকায় কিনে এনেছিলেন। সেই দুটি বাছুর দুই বছর পুষে তারা পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন।
সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের ভ্যান চালক বাবু আলী জানান, তিনি ৫০ হাজার টাকায় একটি বাছুর কিনে লালন-পালন করেছেন। এখন গরুর দাম লাখ টাকা। কিন্তু বাছুরের দাম আর খাবার খরচ বাদ দিলে কোনো মুনাফা থাকছে না। নিজের পরিশ্রমতো হিসেবেই আনেননি। তাহলে কী আশায় তারা বাছুর পালন করেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, খাবার খরচ লাগে দিনে দিনে। কিন্তু গরু বিক্রি করার সময় একসঙ্গে টাকাগুলো পাওয়া যায়, এটাই লাভ।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পুরো জেলায় প্রায় ১০ হাজার খামারি রয়েছেন, যারা গাভি ও ষাঁড় পালন করেন। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন, কেউ শখের বশে, কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে, কেউ সংসারে সচ্ছলতা আনতে একটি-দুটি করে ষাঁড় বাছুর পালন করেন। এদের সংখ্যা প্রায় অর্ধলাখ। এবারও জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা ছিল ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪টি গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ৯৩ হাজার ১০০টি। এত গরু বিক্রি হওয়ার পর বাছুর গরু দিয়ে আবার খামার শুরু হয়। আবার খাামরিরা যে শুধু কোরবানি ঈদের পর বাছুর কেনেন তা নয়, তারা পুরো বছরই কম-বেশি বাছুর কেনেন। তবে কোরবানি ঈদের পর সবচেয়ে বেশি বাছুর কেনা-বেচা হয়।
আরো পড়ুন: মিশ্র ফলের বাগান করে সফল তিন বন্ধু
এসি/ আই.কে.জে/