ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৮ই আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ ২১ জন উপদেষ্টা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালিত হচ্ছে।
নতুন সরকারের কাছে জনগণের বিপুল প্রত্যাশার চাপ। একমাস একটি সরকারের জন্য খুবই কম সময়। এত কম সময়ে একটি সরকারের ভালোমন্দ বিচার করার সময় নয়। এই সরকার এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ থানা আক্রান্ত হয়, পুলিশ বাহিনীতে হতাহত হয় এবং অনেক থানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নানা দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ। ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিল এবং চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে তারা সচিবালয় অবরোধ করে। সেটারও সমাধান করা হয়েছে।
প্রশাসনিক পদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে পরিবর্তন করে বঞ্চিতদের নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগেও পরিবর্তন ঘটেছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন গঠন, দুর্নীতি দমন এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের উদ্যোগ, কালো টাকা সাদা করার প্রথা বাতিল, ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য কমিশন গঠন, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৫ই আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে কিছুটা নমনীয়তা দেখানো হয়েছে, যেখানে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নতুন সরকারের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা যায়নি। এসব ক্ষেত্রে শুধু হাতবদল হয়েছে।আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয়নি ও পুলিশ বিভাগ এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
সরকার অনেক ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা দৃশ্যমান হতে ও সুফল পেতে হয়তো আরো সময় লাগবে। একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ব্যাপারে এই সরকারের বিপুল প্রত্যাশা। আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সমর্থ হবে।
আই.কে.জে/