জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গতকাল শনিবার (১৬ই আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জুলাই সনদ ও গণপরিষদ নির্বাচন’ শিরোনামের আলোচনা সভায় বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আমাদের নোবেল-লরিয়েট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চোখে পড়ে না। উনাকে লন্ডন যেতে হয়। তিনি লন্ডনে গিয়ে সিজদা দিয়েছেন। সিজদার মাধ্যমে, ওহির মাধ্যমে উনি আদেশ পেয়েছেন।
নাসীরুদ্দীন বলেন, সেটা একটা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে এই সংবিধানের অধীনে। কিন্তু আপনার (ড. ইউনূস) সিজদা তো ঠিক হয়নি। আপনার সিজদা দিতে হবে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। কারণ, জনগণ আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সেই সিজদার মাধ্যমে আপনি সঠিক দিকনির্দেশনা পাবেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল গতকাল শনিবার (১৬ই আগস্ট) তার ইউটিউব চ্যানেল ‘কথা’তে এই বিতর্ককে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন। আজ রোববার (১৭ই আগস্ট) দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওটি প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার বার দেখা হয়েছে।
সাংবাদিক মাসুদ কামালের বিশ্লেষণ
মাসুদ কামাল বলেন, এনসিপির নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পাশাপাশি দলের আরেক নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহও একই মত প্রকাশ করেছেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, ‘বিশ্বের ইতিহাসে নজির নেই যে, একজন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লন্ডনে গিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।’
মাসুদ কামাল বলেন, ‘'তারা ভুল বলেননি। এতদিন তারা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে এক ধরনের ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দিয়েছেন, এখন আর দেন না।'’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারপ্রধান যখন কোনো রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বসেন, সেটা হয়তো নজিরবিহীন কিন্তু মিথ্যা নয়।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) দেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতা; কিন্তু ক্ষমতায় আমরা তাকে বসাইনি, আমরা বসিয়েছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। সেজন্য ইউনূসকে তার কর্তৃত্ব ধরে রাখতে হবে। কিন্তু তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সব সময় সবার সঙ্গে আন্তরিক হয় না।’
নির্বাচন, নেতৃত্ব ও গণতন্ত্র: জনগণের ভূমিকা
মাসুদ কামাল মন্তব্য করেন, যদিও লন্ডনের মিটিংয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, গত ৫ই আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, কোনো নির্দিষ্ট তারিখ দেয়নি। এই প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কথাগুলো হয়তো রাগের মাথায় বলা হয়েছে।
মাসুদ কামাল মন্তব্য করেন, ‘ড. ইউনূস শুরুতে ছাত্রদের কাছ থেকে উঠে এলেও আজ সম্ভবত ছাত্রদের সঙ্গে তার সম্পর্ক জটিল হয়েছে। তাই তাকে এখন জনগণের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে, বিদেশ নয়।’
দ্বৈত নাগরিকত্ব ও সুবিধাবাদ
মাসুদ কামাল উল্লেখ করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদে অনেক বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিকদের নিয়োগ দিয়েছেন, যা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের দেশের উন্নতি চায়, সে দেশের বাইরে পা ফেললে তাকে সুবিধাবাদী বলা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব চায়, তাহলে তাকে সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক এবং দেশের মাটিতে থাকা ব্যক্তিদের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।’
সুযোগ ও দায়িত্ব: এখনই সময়
মাসুদ কামাল বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, যিনি সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। কিন্তু আজ তার কর্মকাণ্ড জনগণের স্বার্থে পুরোপুরি প্রভাব ফেলছে না।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এখনো সময় আছে। দেশের জন্য, জনগণের জন্য সঠিক পথ বেছে নিতে হবে। রাজনৈতিক বিভাজন ও পার্টি-সংঘর্ষে হারিয়ে যাবার সুযোগ নেই।’
খবরটি শেয়ার করুন