শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‌'মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে পথ চলতে না পারলে অন্ধকার দূর হবে না'

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:০৯ অপরাহ্ন, ২৭শে জানুয়ারী ২০২৪

#

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত 'নির্বাচন, সহিংসতা ও মানবাধিকার উত্তরণের পথ' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বলা হয়েছে, মনোজগত সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এই মনোজগতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে। এর বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে পথ চলতে না পারলে অন্ধকার দূর হবে না। সভায় বক্তারা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত না আসায় সহিংসতা, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক হামলা-নির্যাতনের শঙ্কা ছিল না। কিন্তু এই ধারণা কিছুটা হলেও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। এটা জাতিকে এক নতুন অভিজ্ঞতা ও ভিন্ন বার্তা দিয়েছে।

শনিবার (২৭শে জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক। সভার শুরুতে ধারণাপত্র উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার।

মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ।

সভায় নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার কয়েকজন নারী ও পুরুষ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। 

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে, তবে যা হয়েছে তাও ঘৃণ্য। তার অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি ঢুকেছে। তাদের হাত থেকে দলকে পরিশুদ্ধ করার কাজটিকে এগিয়ে নিতে হবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ শক্তি কতখানি বেপরোয়া তা কয়েকদিনের কর্মকাণ্ডে টের পাওয়া যাচ্ছে। এখনই সতর্ক ও কঠোর না হলে সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, সাম্প্রদায়িকতার সংস্কৃতি থেকে দেশ বেরোতে পারছে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ধর্ম নিয়ে যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাজনীতিকরা রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনীতিতে পরিবর্তন আনা তাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ রাষ্ট্রের নেই।

সাংবাদিক শাহরিয়ার কবীর বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে যেসব নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিল, পাঁচ বছরে তা বাস্তবায়ন করেনি। সে সব অঙ্গীকার আবার এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে সন্নিবেশিত হয়েছে। নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দ্বিধা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রদায়িকতার কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই শুধু আক্রান্ত হননি, অনেক আওয়ামী লীগ প্রার্থীও এর শিকার হয়েছেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভালো কারিকুলাম করেছে আওয়ামী লীগ সরকার, কিন্তু উগ্রবাদীরা তা প্রত্যাহার করে তাদের মতো করে কারিকুলাম চান। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। একাত্তরে তারা পরাজিত হয়েছে, কিন্তু সমাজ থেকে, রাজনীতি থেকে তারা নির্মূল হয়নি।

সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেন, যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন, তাদের মাঠে নামতে হবে। এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন। মনে রাখতে হবে, রাজনীতি, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধর্মান্ধতার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করা যাবে না। এমনকি আওয়ামী লীগ হলেও নয়। সংখ্যালঘু কমিশনের দাবির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রচিন্তায় পরিবর্তন না হলে কমিশন গঠিত হলেও সংখ্যালঘুদের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে না।

অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সবসময় নির্যাতিত হচ্ছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন হিন্দু শিক্ষক অত্যন্ত দুঃখজনক পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হবে।

আই.কে.জে/


বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ

খবরটি শেয়ার করুন