ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এক মেডিকেল শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনায় করা মন্তব্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ২৩ বছর বয়সী ওই ছাত্রী কীভাবে গভীর রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে গেলেন? খবর এনডিটিভির।
ঘটনার পর প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওই ছাত্রী একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ত। তাহলে দায়িত্ব কার? রাত সাড়ে ১২টায় সে কীভাবে বাইরে গেল?’
মমতা আরও বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকেই তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং রাতের সময়ের ‘সংস্কৃতি’ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের বাইরে যেতে দেওয়া উচিত নয়। নিজেদের রক্ষা করতে হবে। জায়গাটা জঙ্গলের মতো এলাকা।’
বিজেপি শাসিত ওড়িশা সরকারের দিকে আঙুল তুলেও মমতা বলেন, ‘ওড়িশায় মেয়েরা সমুদ্রসৈকতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওদের সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?’
দোষীরা শাস্তি পাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। তিনি একে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক’ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মমতা বলেন, ‘আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। অন্য রাজ্যগুলোতেও এমন ঘটনা ঘটলে আমরা নিন্দা করি। মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা সব জায়গায়ই এমন ঘটনা ঘটেছে। সেসব রাজ্যের সরকারকেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এদিকে বিজেপি মমতার মন্তব্যকে ‘ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা’ বলে কটাক্ষ করেছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, যৌন সহিংসতার ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বদলে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘লজ্জাহীন@MamataOfficial নারীসমাজের কলঙ্ক, বিশেষ করে একজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েও। আরজিকর, সন্দেশখালির পর এবার এই ভয়াবহ ঘটনা। কিন্তু ন্যায়বিচার দেওয়ার বদলে তিনি ভুক্তভোগীকেই দোষ দিচ্ছেন!’
গৌরব আরও লিখেছেন, ‘যে মুখ্যমন্ত্রী মেয়েদের রাতের বেলা বাইরে যেতে বারণ করেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে দোষ চাপান, তার নৈতিক অধিকার নেই মুখ্যমন্ত্রী থাকার। মানুষ এখন বুঝতে পারছে, তারা এক হৃদয়হীন, বিশৃঙ্খল নেত্রীর ওপর ভরসা করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদত্যাগ করতে হবে এবং আইনের আওতায় আসতে হবে।’
বিজেপির আরেক মুখপাত্র শাহজাদ পুনাওয়াল্লা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ‘বেটিকে (মেয়েকে) দোষ দেন, আর বালাত্কারিকে (ধর্ষককে) রক্ষা করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বারবার, আরজিকর, সন্দেশখালি, পার্ক স্ট্রিট প্রতিবারই এমন করেছেন। কাল যারা গলা ফাটাচ্ছিল সুপ্রিয়া শ্রীনিতে, প্রিয়াঙ্কা বদ্রা, রাহুল গান্ধীরা, এখন কি মুখ খুলবেন?’
ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী ওড়িশার জালেশ্বরের বাসিন্দা। তিনি দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। গত শুক্রবার (১০ই অক্টোবর) রাতে তিনি এক বন্ধুর সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন। এ সময় কিছু পুরুষ তাদের কাছে আসে এবং জোর করে মেয়েটিকে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
খবরটি শেয়ার করুন