ছবি : সংগৃহীত
বর্তমানে সর্বত্রই এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। কয়েকদিনের মধ্যে এটা আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। গত রবিবার এক প্রকার ঘোষণা দিয়েই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে হামলা করেছে পয়ত্রিশটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুধু হামলা নয়, ছাত্ররা ব্যাপক লুটপাট করেছে। পরেরদিন ঠিক একই কায়দায় মোল্লা কলেজে হামলা করে সোহরাওয়ার্দী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসব হামলায় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে কয়েকবার ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ কিংবা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও নিউমার্কেট এলাকা। সে সব সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতও হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের রাজপথ-রেলপথ অবরোধের মাধ্যমে তারা লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।রেলে পাথর নিক্ষেপ করার কারণে শিশুসহ অনেক মানুষ আহত হয়।
গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলন। তারা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করলে ঢাকার বিস্তীর্ণ এলাকা যানজটে জিম্মি হয়ে পড়ে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গার্মেন্টসহ শিল্প-কলকারখানায় চলছে অস্থিরতা। পরিণতিতে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃপক্ষ। ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশ জটিল হয়ে পড়ায় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
সেপ্টেম্বরে অশান্ত হয়েছিল পাহাড়ি অঞ্চল।প্রথমে চোর সন্দেহে একজন বাঙালিকে গণপিটুনিতে হত্যা করে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের কিছু লোক। সেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত। তারপর থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্তব্য বাকি দুই জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি সংঘর্ষে চলে যায়। তবে প্রথম দিকে বাস্তব ঘটনা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেশি মাত্রায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রচুর গুজব ছড়িয়েছে। যার কারণে পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে চলে যায়। ফেসবুকে গুজব, অপতথ্য ও ভুল ছবি ছড়ানোর পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতাও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গমাটিতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করাও হয়েছিল।পরবর্তীতে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পাহাড় থেকে শিল্পাঞ্চল সর্বত্রই অরাজকতা চলছিল। নতুন সংযোজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা। যে ছাত্ররা একত্রে আন্দোলন করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, আজ তারাই একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা শুধু ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল, একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। কিন্তু সরকার এখনো নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। মানুষ এখনো নির্বাচনমুখী হয়নি।এই সুযোগে বিভিন্ন গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যক্রম শুরু করেছে।ছাত্রসমাজের মধ্যেও বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেউ কারো কথা শুনছে না।
সরকার শক্তভাবে এসব সমস্যা সামাল দিতে না পারলে দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা ফিকে হয়ে আসবে। দেশে সুশাসন ক্রমান্বয়ে অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। বিক্ষোভ আন্দোলন করা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হলেও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন কারোই কাম্য হতে পারে না।
বিগত সরকারগুলোর মতো বর্তমান সরকারও প্রতিটি ঘটনায় ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খুঁজে পাচ্ছে। ষড়যন্ত্রতো থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা মোকাবেলা করা তো সরকারেরই দায়িত্ব। শুধু পতিত সরকারের দোসরদের ষড়যন্ত্রের কথা বলে চালিয়ে দিলে হবে না। মানুষ স্বস্তি চায়, মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে চায়। মানুষ এই অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে মুক্তি চায়। সাধারণ মানুষ জানতে চায়, এই অস্থিরতার শেষ কোথায়?
আই.কে.জে/