মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক *** প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার পথ খুঁজতে অংশীজনদের সঙ্গে বসবে ইসি *** দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক *** তিনদিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেন পুতিন *** পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার *** অবশেষে মডেল মেঘনা আলমের জামিনে মুক্তি *** নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল *** ‘প্রাচীন জ্ঞানের দোহাই’ দিয়ে ভারতে নিজের মূত্রপান বাড়ছে *** ভারত ও পাকিস্তান দুই পক্ষই সংযম প্রদর্শন করবে, আশাবাদ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর *** অভিনেতা ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা বিরক্তিকর: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

সন্তোষ শর্মাকে নিয়ে আলোচনা কতদূর গড়াবে?

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মাকে নিয়ে আবার 'স্পর্শকাতর' আলোচনা-পর্যালোচনা। তুমুল সমালোচনা চলছে গত ছয়দিন ধরে। এবার দেশের ডানপন্থী ও বামঘরানা- দুই শিবিরেই তার বিরুদ্ধে আলোচনা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক সাংবাদিক আলোচনা-সমালোচনায় এলেও দেশের দুই শিবিরকে একসঙ্গে কারো সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। সমর্থক পক্ষ চুপ থাকলে বিপক্ষ গোষ্ঠীকে সরব হতে দেখা যায়। সন্তোষ শর্মার বেলায় চিত্র ভিন্ন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের’ (র) সঙ্গে 'সংশ্লিষ্টতার' দাবি তোলে তার বিচারের দাবি জানাচ্ছে একপক্ষ।

দেশ-বিদেশে, বিশেষ করে জামায়াতের সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা তাকে ঘিরে নেতিবাচক আলোচনা করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাদের আলোচনায় সহমত জানিয়ে অনেক ইসলামি বিশেষজ্ঞ, আলেম বা মাওলানা হিসেবে পরিচিতরা অংশ নিচ্ছেন। গত ২৩শে এপ্রিল ঢাকার একটি মিলনায়তনে জামায়াতের আয়োজিত 'প্রীতি সমাবেশে' সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি ঘিরে এবারের আলোচনার জন্ম। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী তাকে নিয়ে ফেসবুক ও টুইটারে পোস্ট দিয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে 'বিতর্কিত সাংবাদিকের উপস্থিতি' মেনে নিতে পারছেন না তারা।

আলোচিত 'প্রীতি সমাবেশের' আয়োজক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো  মন্তব্য করেনি। যে পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে সন্তোষ শর্মা জামায়াতের আয়োজনে অংশ নিয়েছেন, সেই পরিষদের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুখবর ডটকমকে বলেন, 'নির্দিষ্ট ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে পরিষদের ব্যানার ব্যবহার করা তার উচিত হয়নি। এ পরিষদ বরাবরই নির্দলীয়।' প্রগতিশীল মনস্ক নেটিজেনরাও সন্তোষ শর্মার সমালোচনা করছেন জামায়াতের অনুষ্ঠানে পূজা পরিষদের ব্যানারে উপস্থিত হওয়ায়। ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে 'বেশ তাৎপর্যপূর্ণ' মনে করছেন কেউ কেউ।

মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত দৈনিক আমার দেশ মনে করছে, জামায়াতের অনুষ্ঠানে সন্তোষ শর্মার উপস্থিতিকে 'জামায়াতের মূল স্রোতের রাজনীতিতে ফেরার কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে, অন্যদিকে বামপন্থী ভাবমূর্তির গণমাধ্যমের প্রতিনিধির এমন উপস্থিতি সমাজে বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।' অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলের এক সংসদ সদস্যের মেয়ের জামাতা ও আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্তোষ শর্মা কেন জামায়াতের অনুষ্ঠানে, এ প্রশ্ন অনেকের।

তাকে ঘিরে এ আলোচনা কতদূর গড়াবে, বা আলোচনাগুলো কী পরিণতি পাবে- এ প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিক সমাজে। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো কারো আলোচনা সাংবাদিক সন্তোষ শর্মাকে ছাড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্যে 'বাক্যবাণের শিকার' হচ্ছে সনাতন সম্প্রদায়। এমনিতেই নানা কারণে আতঙ্কে আছেন সংখ্যালঘুরা। তাই এক ব্যক্তিকে ঘিরে সৃষ্ট আলোচনা-সমালোচনার দায় কোনোভাবেই যেন একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দিকে না গড়ায়, সেদিকে সতর্ক থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, ২৩শে এপ্রিল পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সন্তোষ শর্মা জামায়াতের 'প্রীতি সমাবেশে' অংশ নেন। এতে ডান ও বামধারার রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম হয়। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব।

অনুষ্ঠানের কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ছবিতে দেখা যায়, সন্তোষ শর্মা জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসে আছেন। ওই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও বিশেষভাবে বিতর্কিত হয়ে ওঠে। এতে দেখা যায়, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান সন্তোষ শর্মার পাশে গিয়ে করমর্দন করছেন এবং দু'জনই হাস্যোজ্জ্বলভাবে কথা বলছেন। 

গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বারবার নেতিবাচক আলোচনায় আসছেন সন্তোষ শর্মা। যদিও আলোচনাগুলো নির্দিষ্ট কিছু ঘরানা থেকেই বারবার উঠছে। আমার দেশ পত্রিকায় চলতি বছরের ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রথমে সংবাদ হয় সন্তোষ শর্মাসহ আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির সমর্থক দেশের জ্যেষ্ঠ ২৪ সাংবাদিককে নিয়ে। প্রতিবেদনটিতে ৫৮ কোটি টাকা লেনদেনের কথা বলা তার ব্যাংক হিসাবে। অবশ্য তিনি এক বিবৃতিতে আমার দেশের অভিযোগ 'সত্য নয়' বলে দাবি করেন।

এরপর আমার দেশের কাছে এক মাওলানা অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে মধ্যরাতের নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত আলেমকে গ্রেপ্তার ও গুম করে শেখ হাসিনার সরকার। গ্রেপ্তার ও গুমের পর ডিবির কার্যালয়ে গোয়েন্দাদের সঙ্গে পাশাপাশি উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেন সন্তোষ শর্মা। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে হৈচৈ হয়। এ অভিযোগের যথাযথ জবাব সন্তোষ শর্মা এখনো দেননি। কারে কারো মতে, সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার চর বলে অভিযুক্ত করার চর্চা দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে।

তবে এবারের মতো বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রথম সারির একটি দৈনিকের সম্পাদককে নিয়ে যেভাবে লেখালেখি ও আলোচনা হচ্ছে, তা অতীতে কখনো হয়নি। ১৯৯৭ সালে জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনে দেশের অন্তত ষাটজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের তালিকা প্রকাশ করে বলা হয়, তারা ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস থেকে প্রতিমাসে 'মাসোহারা' নেন। এ বক্তব্যের সত্যতা পত্রিকাটি পরে প্রমাণ করতে পারেনি।

অন্যদিকে কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও দেশের শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ২০২২ সালের ১৬ই অক্টোবর সন্তোষ শর্মার সম্পাদনায় বাজারে আসে কালবেলা। অচলায়তন ভাঙার দৃপ্ত শপথে ‘আঁধার পেরিয়ে’ স্লোগানে পত্রিকাটি বাজারে এসে তুমুল আলোড়ন তোলে। ছাপা পত্রিকায় আস্থা ফেরাতে পাঠকদের উপহার দেয় একের পর এক দুর্দান্ত আলোচিত প্রতিবেদন। গণমাধ্যম, গণমানুষের কণ্ঠস্বর—তা ফুটিয়ে তুলতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা শুরু থেকেই পত্রিকাটি করে আসছে।

কালবেলা প্রকাশিত হওয়ার এক বছর পূর্ণ হওয়ার কিছুূদিন পরই পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান সন্তোষ শর্মা। পত্রিকাটি থেকে চাকরিচ্যুত করা হয় আবেদ খানকে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ‘আসছে মার্কিনি ঝড়’ শিরোনামে আবেদ খানের লেখা উপসম্পাদকীয়কে কেন্দ্র করে ওই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। কালবেলা থেকে আবেদ খানকে পদত্যাগ করতে বলা হলেও তিনি সে আদেশ মেনে নেননি। এরপর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

এইচ.এস/


সন্তোষ শর্মা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন