ছবি : সংগৃহীত
রবিউল হক
আমাদের সমাজের নানা সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য গান। যেমন- ম্যালেরিয়া, মহামারি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রসঙ্গে অসংখ্য গণসংগীত রচিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে গণশিল্পীদের দৃষ্টি ছিল, কোথায় মানবিকতার গলদ, কোথায় মুক্তি ও ন্যায়নীতি। সেবকের ভূমিকায় তারা রচনা করেছেন দুর্যোগ মোকাবেলার গান। দুর্যোগের সাথে এই অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিয়ত বসবাস। মৌসুমী বায়ুর কারণে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, কাল-বৈশাখীর ঝড়, নদী-ভাঙন ইত্যাদি ষড়ঋতুর এই দেশে কোন না কোন সময়ে লেগেই থাকে। ১৯৭০ সালে উপকূলীয় অঞ্চলে এমনই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে যায়। এই দুর্যোগে ১২ লক্ষ কিংবা তারও বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বহি:বিশ্ব থেকে আশার বাণী শোনা গেলেও তৎকালীন সরকারের ভূমিকা ছিল একেবারে নীরব। এ অবস্থায় সারা দেশের মানুষ শোকে যেমন পাথর হয়ে গিয়েছিল ঠিক তেমনি ঘৃণা ও ক্রোধের মাত্রাও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে সংগীত শিল্পীরা অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছিল। জনৈক বিশিষ্ট শিল্পীর মতে, তখনকার বেশ কিছু গণসংগীতে শোক ও বেদনার মসৃণ সুরে বাংলার আপামর জনগণ স্বজন হারানোর শোকে একসাথে গলা মিলিয়ে কেঁদেছেন। আবার অন্যদিকে মুক্তিপাগল দামাল ছেলের কিষাণের সুরও এতে পাওয়া যায়। সে সময় প্রেসক্লাব এক পথমিছিলের আয়োজন করেছিল। মিছিলে ঢাকার জনগণ যেভাবে সাড়া দেয় তা ছিল স্মরণীয়। ঢাকার ইসলামপুর এবং চকবাজার এলাকার অধিবাসীরা দোকান থেকে সোনার চেন ছুঁড়ে দিয়েছিল মিছিলের লালসালুতে।
এই মিছিলে আলতাফ মাহমুদ- এর লেখা ও সুর করা একটি গান বারবার গাওয়া হয়েছিল। আর তা হলো-
‘কাঁদো বাংলার মানুষ আজিকে কাঁদো
কাঁদো কাঁদো ভাই-বোন
সোনার দেশের সোনার মানুষ
হারিয়ে গেছে হায়
এসো দুঃখের অগ্নিবাণে
জমাট ব্যথার ঘূর্ণিটানে
ধনের পাহাড়ে অনড় মহলে
কাঁপন লাগিয়ে যাই… কাঁদো…’।।
বানিয়াচঙে একবার ভয়াবহ ম্যালেরিয়া ও মহামারি দেখা দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে দশহাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস তখন ভাটির সুরে লিখলেন-
‘বানিয়াচঙের প্রাণবিদারী ম্যালেরিয়া মহামারি
হাজার হাজার নরনারী মরছে অসহায়।
ভারতবর্ষের সেরা গ্রাম হাজার লোকের ধাম
তাহার আজ কী পরিণাম দুঃখে মরি হায়’।
জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ‘নবজীবনের গান’ – এর একটি অংশে ম্যালেরিয়ার ঘটনা বর্ণনা করে এক নাটকীয় চরিত্রের মতো। গানটি হলো-
‘দেখছ কি সবই উজাড় হোলো।
(আহা) ম্যালেরিয়ার দেশ ছাইল
(আহা) মহারোগে দেশ ছাইল
দেখছ কি সব উজাড় হোলো।
এককালে সব ঘরে ঘরে
ছিল প্রাণের হাসি
এখন ঘরের লোককে চিতায় তুলে
হলেম শ্মশানবাসী।
ভেঙে গেল সোনার হাটে প্রাণের মেলা দেখছ কি
দেখছ কি সবই উজাড় হোলো’।।
এস/ আইকেজে