ছবি: সংগৃহীত
জীবিত তিন স্ত্রীকে মৃত দেখিয়ে চতুর্থ বিয়ে করার অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজশাহীর বাগমারা থানার এসআই আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার তৃতীয় স্ত্রী সম্প্রতি রাজশাহী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বাগমারা থানায় কর্মরত আছেন এসআই আব্দুল মজিদ। ২০২৩ সালের শেষ দিকে গনিপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুরে একটি মামলার তদন্তে গিয়ে তার বর্তমান তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে মজিদ নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন। প্রথমে নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দেন। পরে জানান, তার স্ত্রী দুই বছর আগে মারা গেছেন।
ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে এসআই মজিদ ওই তরুণীকে মোটরসাইকেলে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যান। পরে বগুড়ায় একটি হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাত যাপন করেন এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এর কিছুদিন পর ২০২৪ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক দেড় লাখ টাকা মোহরানা ধার্য করে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর রাজশাহী কোর্ট এলাকার বিদ্যা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ পায় মজিদের আগের দুই স্ত্রী জীবিত আছেন। এ নিয়ে তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। একপর্যায়ে চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে পাঁচ মাসের মাথায় তাকে তালাক দেন এসআই মজিদ।
তালাকের সময় দেড় লাখ টাকা মোহরানার পাশাপাশি আরও দেড় লাখ টাকা দেন। কিন্তু তালাকের কিছুদিন পর পুনরায় যোগাযোগ শুরু করেন মজিদ। ভুল স্বীকার করে আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে ২০২৫ সালের ২রা মে বগুড়ায় পাঁচ লাখ টাকা মোহরানা ধার্য করে দ্বিতীয়বারের মতো ওই তরুণীকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি ওই স্ত্রীর সঙ্গেই বসবাস শুরু করেন।
তবে সংসার টিকিয়ে রাখার শর্তে স্ত্রীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করেন এবং পরবর্তীতে আরও টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই মজিদ নানা হুমকি দেন তাকে।
অভিযোগকারী জানান, ‘এসআই মজিদ আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমি পুলিশে চাকরি করি, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। অভিযোগ করলে উল্টো ক্ষতি হবে। যেকোনো সময় বাসা থেকে তুলে নিয়ে যেতে পারি, তখন পৃথিবীতে তোমার কোনো চিহ্নও থাকবে না।’
তিনি আরও জানান, ‘সংসারে সন্তান নিতে চাইলে শাসন-গর্জন করেন এবং গর্ভধারণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে তাকে দুবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়।’
উল্লেখ্য, এসআই মজিদের প্রথম স্ত্রী ও দ্বিতীয় স্ত্রী পৃথকভাবে বসবাস করছেন। আগের দুই স্ত্রীর ঘরে দুটি করে সন্তান রয়েছে। এছাড়াও প্রথম স্ত্রীর বাসায় কাজ করা গৃহকর্মীকেও তিনি বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসআই আব্দুল মসজিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার ভিত্তি নেই। এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।’
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, এটা এসআই মজিদের পারিবারিক ব্যাপার। তার সাথে কথা বললে বিষয়টি জানাতে পারব।
অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবরটি শেয়ার করুন