প্রতীকী ছবি
পারিবারিক সমস্যা, সম্পর্কে টানাপোড়েন, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, কর্মহীনতা-সহ একাধিক সমস্যা সারা বিশ্বে মানুষের জীবন কার্যত দুর্বিষহ করে তুলেছে। একটা বৃহত্তর অংশের মানুষের মুখের হাসি চলে গিয়েছে।
তবে এরই মধ্যে একটুকরো এমন জায়গাও রয়েছে, যেখানকার মানুষ এখনো অন্যদের তুলনায় অনেকটাই সুখে এবং শান্তিতে বসবাস করেন। এটি এমন একটা দেশ, যা গত ৬ বছর ধরে সবচেয়ে সুখী দেশের তকমা পেয়ে আসছে। এখানকার জনসংখ্যার গড় মানুষই সুখী। সম্প্রতি একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন সেই রহস্য।
সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হলো ফিনল্যান্ড। সমীক্ষকরা দেখেছেন, এখানকার বেশিরভাগ মানুষই কখনো হতাশ হন না। মনোবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক মার্টেলা জানিয়েছেন, ‘এটা বললে আরও স্পষ্ট করে বলা হবে যে, ফিনল্যান্ড হলো সেই দেশ, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে কম অসুখী মানুষ বসবাস করেন।’
নিউ ইয়র্ক পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, মনোবিজ্ঞানী মার্টেলা বলেছেন, এর পেছনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে৷ আর এই ৩টি কারণই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, যে কোনো দেশের মানুষ যদি এই নিয়মগুলো মেনে চলতে শুরু করেন, তাহলে তাদের সুখী হতে বেশি সময় লাগবে না। এছাড়াও আসবে সংহতির অনুভূতি, যা যে কোনো খারাপ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার শক্তি দেবে।
আরো পড়ুন : যে গ্রামের মানুষ খাবার খায় এক দেশে, ঘুমায় অন্য দেশে
প্রথম নিয়ম হলো, সবার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকা। মার্টেলা বলেন, ফিনল্যান্ডের মানুষ ছোট থেকেই তাদের আশপাশের মানুষের যত্ন নেওয়ার প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকেন। এটি তাদের বেড়ে ওঠার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানকার বাচ্চাদের সব সময় অন্যকে সাহায্য করার, ভালবাসার শিক্ষা দেওয়া হয়।
এখানে প্রত্যেকেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সখ্যতা রাখার চেষ্টা করেন। সবসময় এমন কিছু করার চেষ্টা করতে থাকেন, যাতে তাদের মুখে খুশি দেখা দেয়। হাসানোর চেষ্টা করেন, গল্প করেন, কখনো কেউ কারও সঙ্গীর অভাব বোধ করতে দেন না।
ফিনল্যান্ডে পরিচালিত অনেক গবেষণায় নিশ্চিত ভাবে জানা গিয়েছে, যারা নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, তাহলে তারা নিজের জীবনেও সুখী হতে পারেন। কারণ আপনি আপনার ভালোলাগা, মন্দলাগা, সমস্যা, অভিযোগ, আনন্দ সবকিছু পছন্দের মানুষদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। এতে যেমন মন হালকাও হয়, আনন্দ আসে, তেমন যায় হতাশাও।
দ্বিতীয়ত, এখানকার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় সাহায্য করতে প্রস্তুত। তারা প্রতি মুহূর্তে নাগরিকদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টায় ব্রতী থাকেন।
তৃতীয় বিষয় সম্পর্কে মার্টেলা যেটা জানিয়েছেন, তা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দেশ কীভাবে চলছে, তা আপনার সুখের উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। দেশে অরাজকতা ও অস্থিরতা থাকলে আপনার মুখে হতাশার ছাপ ফুটে উঠবে। নৈরাজ্য সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যাই হোক না কেন। তাই দেশে শান্তি থাকতে হবে। এটাও সুখের মাপকাঠি।
ফিনল্যান্ডে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে। গণপরিবহণ বেশ নির্ভরযোগ্য এবং সস্তা। যারা বেশি আয় করেন এবং যারা কম উপার্জন করেন তাদের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে এবং সেখানে দুর্নীতির পরিমাণ নামমাত্র।
সূত্র: টাইমস নাও, ডেইলি মেইল
এস/ আই.কে.জে