ছবি - সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরি সোনার হরিণ। চাকরির নিশ্চয়তার কারণে সকলেই সরকারি চাকরি করতে চায়। এ জন্যই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই চাকরি প্রত্যাশীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন। বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবির পক্ষে অনেকগুলো যুক্তি আছে। এই চাকরিতে অনেক প্রতিযোগিতা। কেউ চাইলেই এক-দুই বার পরীক্ষা দিয়েই চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া চাকরির পরীক্ষার পাঠ্যসূচিতে অমিল, একই বিষয়ে অধিক সংখ্যক পরীক্ষার্থী, নিয়োগ পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা, কর্মসংস্থানের অভাবসহ নানাবিধ কারণ রয়েছে। সরকারি চাকরিতে সীমিত সংখ্যক পদের জন্য অধিক সংখ্যক প্রার্থী থাকে। দেখা যায়, একটি শূন্য পদের জন্য সহস্রাধিক প্রার্থী আবেদন করেছেন। অর্থাৎ একজনের চাকরি হলেও নয়শত নিরানব্বই জনই বাদ পড়েছেন।
বিশ্বের দিকে তাকালেও মনে হবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বৈষম্য রয়েছে। যেমন ভারতে ৪০ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৮, ফ্রান্সে ৪০, ফিলিপাইন ও তুরস্কে সর্বনিম্ন ১৮ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত। সুইডেনে সর্বনিম্ন ১৬, সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত। এছাড়া রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নম্যান্ট ও স্টেট গভর্নম্যান্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। সেখানে বাংলাদেশ মাত্র ৩০ বছর। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়লেও অবসরের বয়সসীমা ঠিকই বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে এখন উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, শিক্ষিতদের এক-তৃতীয়াংশই বেকার। এই বেকাররা হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদকাসক্ত হওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে এরা পরিবার, সমাজ ও এমনকি দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বেকারদের কর্মসংস্থান হলে একদিকে যেমন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বাড়বে, অন্যদিকে অপরাধ প্রবণতাও কমে আসবে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে। বিগত সরকারগুলো এ বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল। চাকরি প্রত্যাশীরা বিশ্বাস করেন, বর্তমান সরকারের সময়ে তাদের বৈষম্যও দূর হবে।
আই.কে.জে/