ছবি: সংগৃহীত
গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদে থাকা সাংবিধানিক সংস্কারের সিদ্ধান্তগুলো অনুমোদনে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গণভোট আয়োজনের সময় নিয়ে তাদের মধ্য মতভিন্নতা আছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব করেছে, সাংবিধানিক আদেশে সংস্কার কার্যকরের পর তা গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে। সংসদ নির্বাচনের দিন একসঙ্গে এই গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য গতকাল বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় দফার সংলাপ হয়। সেখানে কমিশন সর্বশেষ এই প্রস্তাব দেয়।
এতদিন গণভোটের বিষয়ে আগ্রহ না থাকলেও গতকাল বিএনপি গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে তারা চায় সংস্কার বাস্তবায়নে পরবর্তী সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হবে এবং পরে তা গণভোটে দিয়ে জনমত যাচাই করা হবে।
জামায়াতে ইসলামী সংসদ নির্বাচনের আগে এই গণভোট চায়। এনসিপি গণভোটের বিষয়ে মতামত দেয়নি। তারা সংস্কার বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশের পক্ষে।
এখন এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার সময় দিয়ে কমিশন সংলাপ মুলতবি করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফেরার পর আগামী মাসের প্রথম দিন শেষ দফার সংলাপ হবে। কমিশন জানিয়েছে, ঐকমত্যের জন্য এ সময় তারা দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাবে।
গত ১১ই সেপ্টেম্বর ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে তা স্বাক্ষরের জন্য সংলাপে অংশে নেওয়া রাজনৈতিক দল এবং জোটকে দিয়েছে। সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একমত হয়েছে। ১১টি প্রস্তাবে বিভিন্ন দলের নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে।
পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতি, দুদকের নিয়োগ পদ্ধতিসহ ৯টি সিদ্ধান্তে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। দলটি জানিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে তারা এগুলো বাস্তবায়ন করবে না।
জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল সংস্কার বাস্তবায়ন চায় নির্বাচনের আগে। তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিও চায়। তবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে না–এমন সংস্কারগুলোর নির্বাচনের আগে বাস্তবায়নে দলগুলো একমত হয়েছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনে সাংবিধানিক আদেশ জারির পক্ষে মতামত দিয়েছে। গতকাল সংলাপে এই প্রস্তাব তোলে কমিশন। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ ২০২৫-এ মূল সংস্কারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ (কনস্টিটিউশনাল অর্ডার) জারি করতে পারে।
এ আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এতে গণভোটের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট হবে। জনগণের অনুমোদন পেলে তা জারির তারিখ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত সরকারের কাছে পাঠানো হবে জানিয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে ছয়টি পদ্ধতি আসে। বিশেষজ্ঞরা চারটি পদ্ধতি দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কারে সংবিধান আদেশ ও গণভোটের পরামর্শ দিয়েছে। অনেক দল একে সমর্থন করেছে। কেউ কেউ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে এবং ভিন্নমতও প্রকাশ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে পারে কিনা–এ বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব একাধিক দল দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দলগুলো এ বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা করতে পারে।
খবরটি শেয়ার করুন