ভালোবাসা কারে কয়
—ইব্রাহীম খলিল জুয়েল
তিন বেলা রান্না করে খাওয়াবার নামই
ভালোবাসা নয়;
ফ্যানের বাতাসে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে আশঙ্কায়
ঘুমের অজান্তে পাতলা কাঁথা গায়ে টেনে দেয়ার নামই
ভালোবাসা।
বাজার-সওদা করে ঘরের দশটি দায়িত্ব
পালন করাই ভালোবাসা নয়;
বাইরে থেকে আসার সময় দশ টাকার বাদাম চুপ করে
হাতে গুঁজে দেয়ার নামই ভালোবাসা।
একবারে সুস্থ মানুষটাকেও কোনো এক ছলে গায়ে হাত দিয়ে
ও-মা! শরীরটা গরম লাগছে, জ্বর আসেনি তো!—
এরই নাম ভালোবাসা।
অফিস থেকে ফেরার পথে একটি শাড়ি কিনে এনে
দেখি পরতো কেমন লাগে;
আজকাল থ্রিপিস-টপসের দাপটে শাড়ি পরা তো তোমরা ভুলেই গেছ—
এর নাম ভালোবাসা।
লাখ টাকার উপহার দেয়াই ভালোবাসা নয়;
অফিসে কাজের ফাঁকে ছোট্ট একটি এসএমএস দেয়া
‘টুনটুনি কী করছ তুমি—আই লাভ ইউ টুনটুনি’
—এর নামই ভালোবাসা।
জন্মদিনে একটি চিরকুট লিখে হাতে দেয়া—
তোমায় ভালোবাসি অনেক, তোমায় পেয়ে এই পৃথিবীর কাছে আর কিছুই চাই না—
এর নামই ভালোবাসা।
একেবারে নিরর্থক, নির্গুণ একটি মানুষ,
জীবনযুদ্ধে হাঁপিয়ে উঠা; সংসারের হালটিও এখন ঠিকভাবে ধরতে পারছে না
তাকেও একটিবার বলা— ঘাবড়ে যেও না
আমি তো আছি পাশে;
—এরই নাম ভালোবাসা।
শত অপদার্থ, মূল্যহীন মানুষটি, সংসারের ঘানি টেনে নিঃশেষিত,
অবহেলিত মানুষটিকে বলা— আমার চোখে তুমিই সেরা মানুষ
—এর নামই ভালোবাসা।
মূল্যহীন মানুষটিও ভাববে এই পৃথিবীতে আমার জন্ম একেবারে বৃথা যায়নি।
পকেটে একটি টাকাও নেই ওষুধপথ্য কেনার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবার
তারপরও বারবার তাগিদ দেয়া—ওগো ডাক্তার দেখাও না,
এত দেরি করছ কেন? ভেতরে আবার কোন রোগ বাসা বেঁধেছে কে জানে—
এর নামই ভালোবাসা।
প্রচণ্ড বিরক্তি থাকলেও কাজ থেকে ফেরার পর
হাসিমুখে দরজা খুলে দেয়ার নামই ভালোবাসা।
জোর করে হৃদয় পেতে চেয়ে যা-তা করাই ভালোবাসা নয়;
মনের অজান্তে মনকে জয় করে নেয়ার নামই ভালোবাসা।
আটপৌরে জীবনে বোবাকান্নায়
বুক ভেসে যায় নীরবে;
সেখানে যত জৌলুস আর চাকচিক্য থাকুক
ভালোবাসা থাকে না।
প্রত্যাখ্যান আর অবহেলায় বেড়ে উঠা শিশুটিও
চায় কৈশোরে একটি ফুল নিয়ে কেউ তাকে প্রেম নিবেদন করুক।