ছবি: সংগৃহীত
গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের ১১৬তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গত ১৭ই মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন দিয়েছে।
নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ট্রাস্টের বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হাসান।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইটে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী, দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ১১৫টি। তার সঙ্গে যুক্ত হলো আরো একটি, মোট হলো ১১৬ টি।
এর মধ্যে ১০৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ। এর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গত নভেম্বর মাসে ‘সতর্কতা’ দিয়েছে ইউজিসি।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব নয়। বর্তমানে দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় নীতি রয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন খুবই কম। তথ্যানুযায়ী, জার্মানিতে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরিতে (টেকনিক্যাল) পড়ে। বাংলাদেশে এ হার মাত্র ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
দেশের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি-সার্টিফিকেট নিয়েও দক্ষতা না থাকার কারণে বিদেশ গিয়ে নিম্নমানের কাজ করতে হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ থাকে কম। আবার বরাদ্দকৃত অর্থের সম্পূর্ণ বিনিয়োগও হয় না। দেশের সবচেয়ে সেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের মাত্র ২ শতাংশ ব্যয় হয় গবেষণা খাতে। তাহলে শিক্ষার উন্নতি হবে কিভাবে?
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রতিটি ক্লাস রুমে মাল্টিমিডিয়াসহ কম্পিউটার থাকা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কারিগরি ও ব্যবহারিক ক্লাস বাড়াতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ও বহুমুখী উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।
দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত থাকলেও গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষার বড়ই অভাব। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ও যথাযথ পাঠদান বাড়াতে পারে শিক্ষার গুণগত মান। ইউনেস্কোর পরামর্শ, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা উচিত।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ১৮৯টি সদস্য দেশের মধ্যে যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষাখাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকরা সিডিউল অনুযায়ী ক্লাস নেন না। কোনো কোনো শিক্ষক চার-পাঁচ ঘন্টা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসিয়ে রেখে বিকেলে ক্লাস নেন।
ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখলে সেদিনই নিয়ে নেন টিউটরিয়াল পরীক্ষা, যাতে করে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চাপে রাখা যায়। তবে সব শিক্ষক এক নন, এত অনিয়মের মধ্যেও অনেক ভালো শিক্ষক আছেন।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে অতি উৎসাহী না হয়ে বিদ্যমানগুলোর মান উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের আবাসন ও পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
হলগুলোর ডাইনিং ও ক্যান্টিনে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ছাত্রদের সুষম পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে।
ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রদের মুক্তচর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের রাজনীতির মাঠের চেয়ে ক্লাসের দিকে বেশি মনোযোগ বাড়াতে হবে।
গবেষণায় বাজেট বাড়াতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে এ খাতে প্রণোদনা দিতে হবে। জাতির তরুণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সম্যাসার সমাধান ও নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো কোনো সমাধান নয়, বরং আগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান বাড়ানো ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করাই অতীত জরুরি।
এইচ.এস/