সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে দোয়া ও আমল করলে সংসারে সুখ-শান্তি আসবে

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:১৫ অপরাহ্ন, ৩রা জুন ২০২৪

#

প্রতীকী ছবি

সব মানুষই সুখময় শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে চায়। যেখানে কোনো হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তা থাকবে না। ঘরে-পরিবারে অশান্তি ও কলহ-বিবাদ খুব বেশি দেখা যায়। শয়তানের প্ররোচনাই মূলত ঘরের এসব অশান্তি ও কলহ-বিবাদের মূল কারণ। আর শয়তানের ধোঁকা-প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকতে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী আমল ও দোয়ার বিকল্প নেই। কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করেছেন- ‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’।

ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে শয়তানই মানুষের চিরশত্রু, যে ঘরে বা যে মজলিশে সে প্রবেশ করে ঐ ঘরের পরিবেশকে সমূলে বিনষ্ট করে দেয়। পরিবারের সদস্যদের মাঝে সৃষ্টি করে শত দ্বিধা-বিভক্তি। যা মানুষের সুখ-শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেয়। ধ্বংস করে দেয় সুন্দর আর্থ-সামাজিক অবস্থান।

তাই ঘরে সৃষ্ট অশান্তি দূর করতে কিংবা ঘরকে শয়তানের আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে সুন্নাতের অনুসরণে কিছু দোয়া ও আমল করা জরুরি। তাহলো-

১. পরিবারে সালামের প্রচলন করা

পরিবারের কোনো সদস্য বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই ঘরে অবস্থানরত পরিবারের অন্য লোকদের সালাম দেওয়ার প্রচলন চালু করা। এটি কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ ও কল্যাণ। আল্লাহ বলেন-

فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُون

> ‘যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র। (সুরা নূর : আয়াত ৬১)

> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তুমি যখন তোমার ঘরে প্রবেশ করবে তখন সালাম দেবে; তা তোমার জন্য এবং তোমার পরিবারের জন্য বরকত হবে। (তিরমিজি)

২. ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া

বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই সালামের পর সুন্নাতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক এ দোয়া পড়া-

بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَ بِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا وَ عَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا

উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ওলাজনা ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’ (আবুদাউদ)

৩. খাবারের সময় দোয়া পড়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ’যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করার সময় এবং খাবার খাওয়ার সময় দোয়া পড়ে, তখন শয়তান (একে-অপরকে) বলে- আজ এখানে তোমাদের রাতযাপন এবং রাতের খাবারের কোনো সুযোগ নেই। (মুসলিম)

> হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ আহার করে সে যেন বলে-

بِسْمِ الله বিসমিল্লাহ; আল্লাহর নামে।

তারপর ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

> অতঃপর এই দোয়াটি পড়া-

اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَ اَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ -

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বা-রিক্ লানা- ফী-হি ওয়া আত্বইমনা খাইরাম্ মিনহু।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে এতে বরকত দিন, ভবিষ্যতে আরো উত্তম খাদ্য

দিন’। (তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত)

> যদি কেউ খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে সে যেন বলে-

بِسْمِ اللهِ أَوَّلِهِ وَ أَخِرِهِ

বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি। অর্থাৎ খাওয়ার শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে। (তিরমিজি)

৪. সুরা বাকারা তেলওয়াত করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘সবকিছুরই একটি চূড়া থাকে আর কুরআনের চূড়া হল সুরা আল-বাক্বারা। শয়তান যখন সুরা আল-বাকারার তেলাওয়াত শোনে তখন সে ঐ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যেখানে তা তেলওয়াত করা হয়।’ (মুসতাদরেকে হাকেম)

৫. অশ্লীল বিনোদন থেকে ঘর ও পরিবারকে হেফাজত করা

নিজ নিজ ঘর ও পরিবার-পরিজনকে গান-বাজনা এবং গান-বাজনার সরঞ্জাম থেকে মুক্ত রাখা। কেননা গান-বাজনা হলো শয়তানের আওয়াজ।  আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আল্লাহ বলেন চলে যা, অতপর তাদের মধ্য থেকে যে তোর অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তাদের সবার শাস্তি-ভরপুর শাস্তি। তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ (বাদ্য-বাজনা) দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে শরিক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৬৩-৬৪)

আল্লাহর জিকির যেমন শয়তানকে দূরে রাখে তেমনিভাবে গান এবং বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ রহমতের ফেরেশতাগণকে দূরে রাখে। আর ঘর থেকে যখন ফেরেশতা বের হয়ে যায়, তখন সেখানে শয়তান তার রাজত্ব কায়েম করে।

৬. ঘরে কুকুরের প্রবেশ থেকে সাবধান থাকা

নিজ নিজ ঘরকে কুকুরের প্রবেশ থেকে হেফাজত করা। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ঘরে ছবি এবং কুকুর থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (বুখারি)

৭. ঘরে ছবি ও জীব-জন্তুর মূর্তি না থাকা

ছবি এবং বিভিন্ন জীব-জন্তুর মূর্তি থেকে ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ঘরে মূর্তি বা ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (মুসলিম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত ঘরে অবস্থানকালীন সময়ে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে জীবন-যাপন করা। সুন্নাতের পুরোপুরি অনুসরণ ও অনুকরণ করা। তাতে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে মুমিন। কুরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় ঘরে ফিরে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে আমল করার এবং দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ওআ/

আমল দোয়া

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন