শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন-পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৪৯ অপরাহ্ন, ৯ই মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান গত শনিবার, তার প্রতিবেশী দেশ চীন এবং আফগানিস্তানের শীর্ষ কূটনৈতিকদের সাথে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং সন্ত্রাস দমন সহযোগিতাকে উন্নীত করতে একটি ত্রিপক্ষীয় আলোচনা সভার আয়োজন করে।

জাতিসংঘের কাছ থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়া আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আমির খান মুত্তাকি এই সভায় অংশ নেওয়ার অনুমতি পান। ত্রিপক্ষীয় আলোচনা সভার পঞ্চম রাউন্ডে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কিন গ্যাং এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন।

অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, বাণিজ্য এবং সংযোগের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন।

সরকারি সূত্রমতে জানা যায় যে, পাকিস্তান এবং চীনের প্রতিনিধিরা আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্র দেশ আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনর্গঠনে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আগেই কিন জানান যে চীন এবং পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে বৈঠকে তিনি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য আফগানিস্তানের প্রতিনিধিকে চাপ প্রদান করেন। কিন জানান, আফগানিস্তানের উচিত তার প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা এবং প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগকে গুরুত্ব সহকারে দেখা।

কিন আরো জানান যে, চীন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাথে পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের মতো সন্ত্রাসী হুমকির বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করতে প্রস্তুত। দীর্ঘদিন ধরেই চীনের অভিযোগ রয়েছে যে, ইটিআইএম জঙ্গীরা চীনের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত হামলা চালাতে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করছে।

আইএস খোরাসান নামক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সম্প্রতি বেসামরিক নাগরিক, তালেবান সদস্য এবং চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি করেছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারদারি, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধির ফলে পাকিস্তানের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। 

জারদারি বলেন, সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং আফগানিস্তানের অগ্রগতির পথে বাধাস্বরূপ। 

পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর সদস্যরা আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করছে। ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে শত শত পাকিস্তানি নাগরিকও নিহত হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনির সদস্য।

টিটিপি পাকিস্তান তালেবান নামেও পরিচিত। এটি আফগান তালেবানের একটি শাখা। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে এই সন্ত্রাসী সংগঠন। 

তবে তালেবানরা আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টিকে রীতিমতো অস্বীকার করেন।

তালেবান নেতারা প্রথমদিকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলেন যে তারা নারীসহ সকল আফগান নাগরিকদের অধিকারকে সম্মান করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় তারা আফগান নারীদের বাইরে কাজ করার অধিকার ছিনিয়ে নেয়। এ নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

কিন জানান, পাকিস্তানের সাথে সাথে আফগানিস্তানকেও চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি চীন।

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, বা সিপিইসি, দুটি দেশকে সংযুক্ত করতে এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য নতুন সড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বন্দর তৈরি করছে।

কিন বলেন সিপিইসি এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়াতে রাজি চীন।

চীন ২০১৭ সালে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সাথে ত্রিপক্ষীয় সংলাপ শুরু করে। তালেবানরা সেই সময়ে মার্কিন-সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে মারাত্মক বিদ্রোহ চালাচ্ছিল।

আরো পড়ুন: প্রথমবারের মতো মহাকাশে যাচ্ছেন সৌদি নারী

তালেবান ক্ষমতা দখল করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের দূতাবাসগুলো কাবুল থেকে কাতারে সরিয়ে নেয়। তবে চীন, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক এবং রাশিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশ আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস খোলা রাখে।

পশ্চিমা দেশগুলো যখন আফগানিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থগিত রাখে, তখন চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান নতুন আফগান সরকারের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ায়।

চীন সম্প্রতি আফগান আমু দরিয়া অববাহিকা থেকে তেল উত্তোলনের জন্য ২৫ বছরের চুক্তি পেয়েছে এবং তালেবানদের সাথে অন্যান্য বিনিয়োগের জন্য সক্রিয়ভাবে আলোচনা করছে। আফগানিস্তানে রাশিয়ার রপ্তানি মাসিক ১০০ লাখ ডলারেরও বেশি বলে জানা যায়।

জানা যায়, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার উন্নতির জন্য দক্ষ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয় পক্ষ বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে সম্মত হয়েছে।

 

আফগানিস্তান চীন পাকিস্তান

খবরটি শেয়ার করুন