এস আর শাহিন
নদনদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ যত কমে যাচ্ছে, তত আগ্রাসী হয়ে উঠছে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষ। এর সঙ্গে তাল মেলাতে বাজারে এসেছে বিশেষ এক ধরনের চায়না রিং জাল। অঞ্চলভেদে একে চায়না দুয়ারি, ম্যাজিক জাল নামেও ডাকা হয়। তবে জালটির ব্যবহার অচিরেই দেশীয় মাছ বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হয়। কারণ ৫০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা এ জালে রয়েছে অসংখ্য প্রবেশমুখ। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ যেমন পুঁটি, খলিশা, টাকি, চিংড়ি, ট্যাংরা, শিং, মাগুর, চেলা, ডানকিনা, গজার, মলা, ঢেলা, বৈরালী, কাজলী, পাবদা, শোল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে।
জালের ফাঁস অনেক ছোট হওয়ায় ছোট মাছও রেহাই পাচ্ছে না এ ফাঁদ থেকে। এমনকি এ জালের ফাঁদে পড়ে উজাড় হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী। এ ছাড়া প্রজনন মৌসুমে ধরা হচ্ছে ডিমওয়ালা মাছ। এর ফলে মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কম দাম ও সহজলভ্যতার কারণে চায়না রিং জালটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ব্যবহারবিধি সহজ হওয়ায় জেলেদের পাশাপাশি মৌসুমি মাছ শিকারি এবং সাধারণ মানুষও এ জালের ব্যবহার শুরু করেছে।
যদিও প্রশাসন ইতোমধ্যে এ জালের ব্যবহার রোধে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব জাল জব্দ করে ধ্বংসও করা হয়েছে। মাঝে এই তৎপরতা বন্ধ থাকায় এ জাল ব্যবহারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু মহল। প্রশাসনের উচিত এ জাল ব্যবহার রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
জাল তৈরির কারখানাগুলোতে যাতে এ ধরনের জাল প্রস্তুত করতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অননুমোদিত কারখানাগুলো বন্ধ করতে হবে। প্রশাসনের অভিযানের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। রিং জালের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। সবাই যাতে এই জাল ব্যবহার থেকে বিরত থাকে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে।
আমরা জানি, মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় একটি পুষ্টি উপাদান হচ্ছে আমিষ। এ দেশের মানুষের প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটায় দেশীয় মাছ। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আমিষের চাহিদা পূরণে মাছই একমাত্র উপাদান। একটা সময়ে এ দেশের নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড়ে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ছিল। আমাদের অন্যতম পরিচয় ছিল মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালির এই স্বকীয়তা যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে সবার সুদৃষ্টি কাম্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ
আই. কে. জে/