ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের লেখকেরা প্রায়শই তাদের মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। বর্তমানে তারা জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গে চীনকে চ্যালেঞ্জ করার বিষয়ে সহমত পোষণ করছেন।
ডেভিড ইগনাশিয়াস, মার্ক থিসেন এবং জোস রোজিনের মতো লেখকেরা প্রতিরক্ষা বিভাগে ব্যয়বৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ব্যবহারের মাধ্যমে চীনকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে একমত। তবে এক্ষেত্রে ম্যাক্স বুট নামের লেখক একটু ভিন্নধর্মী চিন্তাধারা পোষণ করছেন। গত মাসে, বিশ্বের জনবহুল দেশ হিসেবে ভারতের উত্থানের পর তিনি চিন্তা করছেন চীনকে মোকাবেলা করতে হলে এখন সবচেয়ে জরুরি হলো ভারতকে বৃহত্তর সমর্থন প্রদান করা।
রক্ষণশীল লেখক বুটের মতে, এই একবিংশ শতাব্দীতে চীনকে হারিয়ে বিশ্বের জনবহুল দেশ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করা ভারতের জন্য অসম্ভবকে সম্ভব করার মতোই ছিল। চীনকে মোকাবেলা করার জন্য ভারতের তেমন শক্তি না থাকলেও দেশটির প্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে চীনকে টেক্কা দেওয়ার মতো এবং একইসাথে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভালো মিত্ররাষ্ট্র হিসেবেও প্রমাণিত হতে পারে।
চীনের বিপুল শক্তির বিপরীতে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক সুবিধাগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিপক্ষে সহজেই ব্যবহার করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে বিশ্বের এক নম্বর উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চীন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও জাপান মিলিতভাবে যতটুকু পণ্য উৎপাদন করছে তার চেয়েও বেশি উৎপাদন করছে চীন। প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজের ক্ষমতা স্থাপন করছে চীন।
ফরিদ জাকারিয়ার মতো লেখকেরা বৈশ্বিক সম্প্রদায়ে ভারতের স্থান সম্পর্কে উৎসাহী, কিন্তু গত দুই দশকে ভারতের দুর্বল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার কারণে তাদের আশাবাদ ক্ষুণ্ন হয়েছে। চীনের অর্থনীতি ভারতের পাঁচগুণ। ভারতের মাথাপিছু আয় ২৫০০ মার্কিন ডলারের তুলনায় চীনের মাথাপিছু আয় ১৩,০০০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে ভারতের কার্যক্ষেত্রে মহিলাদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম, এমনকি এর পরিমাণ সৌদি আরবের মহিলাদের উপস্থিতির তুলনায়ও কম। ভারতের স্যানিটেশন পরিস্থিতি অত্যন্ত জঘন্য, যা উচ্চ শিশুমৃত্যু এবং আয়ুহ্রাসের জন্য দায়ী। ভারতের বিশাল মুসলিম সংখ্যালঘুরা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে চীনের হান জনসংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৫% প্রতিনিধিত্ব করে।
চীনের বিপরীতে, ভারত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় যে বিনিয়োগ করেছে তা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। দেশটির বিশাল জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে দেশটি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও পিছিয়ে রয়েছে। সারা দেশের শাসন ব্যবস্থা অসম, এবং নতুন অবকাঠামো অপর্যাপ্ত। চীনের বিপরীতে, ভারত প্রাতিষ্ঠানিক উপায় দারিদ্রতা মোকাবেলা করেনি, ফলস্বরূপ দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। এই সব ক্ষেত্রেই চীনের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ভারত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করতে চাইলেও ভারত কি সেটা চায়? দেখা যাচ্ছে ভারত ইউক্রেনকে সহায়তা করতে কিংবা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। সামরিক অস্ত্রের জন্য ব্যাপকভাবে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল ভারত। সেইসাথে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য চীনকে মোকাবেলা করতে ভারত প্রস্তুত থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার অংশ হতে নারাজ দেশটি। ভারত অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত কোয়াডের সদস্য হলেও, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সব দেশের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় দেশটি।
অন্যদিকে দেখা যায়, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এখনও অস্থিতিশীল। ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ এশিয়া থেকে ব্রিটিশ প্রত্যাহারের পর মোট পাঁচটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করার আগে ১৯৯৯ সালে এই দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিকতম যুদ্ধ পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের ঝুঁকির পরিচয় দেয়।
অন্যদিকে তাইওয়ানের প্রতি আগ্রাসী আচরণ করছে চীন। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর চীন আগ্রাসীভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইউএসএস রোনাল্ড রিগান এবং এর ক্যারিয়ার টাস্ক ফোর্সের মোতায়েনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়।
খবরটি শেয়ার করুন