শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক সমাধান দিচ্ছে কলম্বিয়ার মেডেলিন শহর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫৪ অপরাহ্ন, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

কলম্বিয়ার শহর মেডেলিন। ছবি : সংগৃহীত

কলম্বিয়ার মেডেলিন তার সবুজ বনাঞ্চল ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত।

কয়েক দশক আগে স্থানীয় সরকার ট্রাফিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাস্তার পাশের সারিবদ্ধ গাছগুলো কেটে ফেলেছিল। ওরিয়েন্টাল এভিনিউ নামক রাস্তাটি এখনও বড় একটি রাস্তা হিসেবেই রয়েছে। তবে এলাকাটি এখনও বড় বড় ফলগাছ, ঝোপঝাড় এবং ফুলের গাছ দ্বারা আচ্ছাদিত। 

এখানে সারাবছর ধরেই নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা বিরাজমান। কেউ কেউ এ শহরকে ‘চির বসন্তের শহর’ হিসেবেও উল্লেখ করেন। এ শহরের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া দীর্ঘ বছর ধরেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। তবে ক্রমবর্ধমান নগরানের ফলে এ শহরের তাপমাত্রাও এখন বাড়তে শুরু করেছে। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিপরীতে সবুজ বনায়নের পদক্ষেপ এ অঞ্চলে কার্যকরী ভূমিকাও পালন করেছে।

বোগোটার পরে কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, মেডেলিন বায়ু দূষণ ও ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ২০১৬ সালে সবুজ করিডোর প্রোগ্রাম শুরু করে। রাস্তার চারপাশ, উদ্যান, পার্ক জুড়ে এ বনায়নের কাজ চলে। এ প্রকল্পের অধীনে শহরের আনাচে কানাচে ১ লক্ষ ২০ হাজারটি গাছ এবং রাস্তা ও পার্কে ১২ হাজার ৫০০ টি গাছ রোপণ করা হয়। ২০২১ সালের মধ্যে ২৫ লাখ নতুন বৃক্ষ লাগানো হয় শহর জুড়ে। প্রকল্পটির জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬৩ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয় এবং বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০২২ সালে ৬ লক্ষ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করা হয়েছে।

সারা শহরে বিদ্যমান নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এ প্রকল্পেরই ফলাফল। ফলে এ প্রকল্প বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এ প্রকল্প শহরটিতে নবজীবন প্রদান করেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্ব যেখানে উদ্বিগ্ন, সেখানে মেডেলিনের এ ধরনের পদক্ষেপ কম খরচেই এ সমস্যার একটি সমাধান প্রদান করে। 

২০১৫-১৬ সালে বায়ু দূষণের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল মেডেলিন। ২০১৬ সালে আবুরা উপত্যকায় দূষণের কারণেই ১৯৭১ জন নাগরিকের অকাল মৃত্যু ঘটে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে মেডেলিন সরকার। কারণ তৎক্ষণাৎ এ দূষণ বৃদ্ধি না কমাতে পারলে এ মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পেতো।

তবে সবুজ প্রকল্পের কারণে রোপিত বৃক্ষগুলো বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দূষণ শোষণ করে নেয়। দূষণ শোষণের জন্য বিশেষভাবে দক্ষ গাছগুলো, যেমন আমগাছ বেশি বেশি করে রোপণ করা হয় সারাশহর জুড়ে। আমগাছ মূলত অধিক পরিমাণে বায়ুদূষণ শোষণ করে নিতে পারে এবং প্রাকৃতিক দূষণে টিকে থাকার যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে আমগাছের।

তবে এ প্রকল্প বায়ু দূষণের পরিমাণ ঠিক কতটুকু কমিয়েছে সে বিষয়ে এ পর্যন্ত কোন সামগ্রিক সমীক্ষা বা পর্যালোচনা করা হয়নি। যাইহোক এ প্রকল্প যে শহরের জলবায়ুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সে বিষয়ে কোন ধরনের সন্দেহ নেই।

২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এ প্রকল্পের অধীনস্থ মাত্র দুইটি পার্ক নুটিবারা এবং ভোলাডোর হিলস প্রতিবছর বায়ুমণ্ডল থেকে ৪০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করছে।

এ সবুজ বনায়নের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ডিজেলভিত্তিক যানবাহনের পরিবর্তে শহরে বৈদ্যুতিক যানবাহন সেবা চালু করেছে, যা বায়ুদূষণ রোধ করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

সবুজ বনায়ন প্রকল্পের জন্য স্থানীয়দের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার ছিল। এ বিষয়ে স্থানীয় নাগরিকেরা পূর্ণ সমর্থন প্রদান করার ফলেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সহজ হয়েছে। বর্তমানে মেডেলিনের প্রায় চল্লিশ লাখ বর্গ মিটার বা ৪৩০ লাখ বর্গ ফুট এলাকা এ সবুজ বনায়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। 

স্থানীয় নাগরিকেরাও স্বেচ্ছায় এসব বৃক্ষ রোপণ ও চারা রক্ষণাবেক্ষণে সহযোগিতা করেছে। এর ফলে মেডেলিনের অনেক নাগরিক মালি হিসেবে কর্মসংস্থানের সুযোগও লাভ করে।

২০১৬-২০১৯ সালে মেডেলিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবেশ বিষয়ক সচিব সার্জিও ওরোজকো জানান যে এ প্রকল্পের ফলাফল তাকে অবাক করে দিয়েছে। কিছু কিছু অঞ্চলে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা হ্রাস তাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ছিল। 

তাছাড়া এ প্রকল্পের ফলে পরিবেশে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, টিকটিকি, ব্যাঙ এবং বাদুরও ফিরে এসেছে, যাদেরকে বেশ কয়েক বছর ধরেই আর দেখা যেত না।

২০১৯ সালে, প্রাকৃতিকভাবে তাপমাত্রা কমানোর জন্য মেডেলিন শহরকে এশডেন পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ অর্জনগুলো প্রকল্পটিকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলেছে। কলম্বিয়ার অন্যসব শহরও এখন মেডেলিনের এ প্রকল্প গ্রহণ করতে উৎসাহী। সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম শহর ব্রাজিলের সাও পাওলো এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

এসকে/ এএম/

তাপমাত্রা জলবায়ু কলম্বিয়া নাতিশীতোষ্ণ

খবরটি শেয়ার করুন