শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তুমিও দোয়া করো, যেন ভুলে যেতে পারি তোমায়—ইতি তোমার ব্যর্থ প্রেয়সী

সাহিত্য ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৮:২৬ অপরাহ্ন, ৫ই অক্টোবর ২০২৩

#

প্রিয়তম,

কেমন আছো? জানি ভালো নেই। আমিও ভালো নেই। আগে যতটা ছিলাম, কাল বিকেলের পর তোমাকে দেখে আরও খারাপ। যদিও তুমি ভেবেছো ভালো-ই, চাক্ষুষভাবে আসলে তা-ই দেখায়। 

স্বামী, সন্তান, শ্বশুরবাড়ি সব মিলিয়ে ভরা সংসার আমার। তাতে অবশ্যই প্রকাশ পায় আমি এক স্বয়ংসম্পূর্ণ নারী, পূর্ণাঙ্গ গৃহিণী। তবে তোমার জন্য আমার খারাপই লাগছে। কারণ তুমিতো আজও একা। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসার চিহ্ন রাখতে তুমি আজও নিঃসঙ্গ। কিন্তু আমিতো নারী, সমাজে আমার অবস্থান ভিন্ন। 

যেখানে ডিভোর্সি মহিলারাও নিজের শরীরে প্রাক্তন স্বামীর চিহ্ন রাখতে পারে না। আবার চড়ে বসতে হয় দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে। সেখানে আমিতো তোমার ব্যর্থ প্রেমিকা। আমার কী সাধ্য আছে সমাজের বিরুদ্ধে ভালোবাসার জন্য লড়াই করা! কাল তোমার সাথে কথা বলে বুঝলাম, আমার প্রতি তোমার অনেক অভিযোগ। কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি। তার মানে এই না যে কিছুই বলার নেই আমার। 

কারণ, আমি তো তোমায় দেখায় ব্যস্ত ছিলাম। আর তুমি ব্যস্ত ছিলে অভিযোগ করায়। কিন্তু তোমার মাঝে আমি কোনো রাগ পাইনি। পেয়েছি কিছু অভিমান। বাচ্চাদের মতো অভিযোগ করছিলে তুমি। আমার মেয়েটাও করে। জানো, স্কুল থেকে এসে কোমরে হাত দিয়ে আমাকে বলে, তুমি আজও আমার চকলেট আনোনি কেন? 

তোমার স্বরও ঠিক এমনই ছিল। আমার কিন্তু বেশ হাসি পাচ্ছিল। আবার কষ্টও হচ্ছিল তোমার আমার কথা না ভেবে এত অভিযোগ দেওয়া দেখে রাগও হচ্ছিল। তোমার অভিযোগ শুনে মনে হচ্ছিল আমি সত্যি পৃথিবীর একজন নিকৃষ্ট নারী। একবার মনে হচ্ছিল, আত্মহত্যাই করি কিন্তু তা তো মহাপাপ। আবার ভাবলাম এই ঘরসংসার সব ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই।অনেক দূরে কিন্তু তাও তো সম্ভব না। আমার যে একটা মেয়ে আছে।

আজ তুমি যেমন অভিযোগ দিচ্ছো, হয়তো ১০ বছর পর সেও অভিযোগ উঠাবে। সে বলতেই পারে, মা তুমি যার ভালোবাসায় ব্যর্থ ছিলে, তার জন্য আমায় ছেড়ে গেলে? আমার প্রতি কি তোমার ভালোবাসা নেই? তখন আমি কী উত্তর দেবো! এই ভেবে আর যেতেও পারছি না। এই চিঠি তোমায় কেন লিখছি জানো? 

তোমার সব অভিযোগের জবাব দিতে। তোমার অভিযোগ ছিল, কীভাবে আছো তুমি এই সুন্দর সাজানো সংসারে, যেখানে আমাকে কথা দিয়েছিলে-তোমার আমার এক ছোট্ট পৃথিবী গড়ে তোলার? কীভাবে রাত্রিযাপন করো তোমার স্বামী নামক সেই মানুষটার বুকে। যেখানে আমি ভেবেছিলাম গভীর রাতে তোমার নিঃশ্বাসের বিচরণ হবে আমার ঘর্মাক্ত দেহে! আজ তোমার একটা মেয়ে আছে, সেখানেও আমার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ছিল প্রতিটি সকাল শুরু হবে ভোরের পবিত্র আলোয় সুখদর্শন করে। স্বপ্ন ছিল বৃদ্ধ বয়সে তুমি আমাকে রোজ বলবে, এই যে আসার সময় বাদাম নিয়ে আসবে নইলে ঘরে ঢুকতে দেবো না। স্বপ্ন ছিল আমি বারান্দায় বসে থাকবো আর তুমি এসে গায়ের চাদর ঠিক করে দিয়ে শাসনের সুরে বলবে, তুমি আর শুধরাবে না? এক্ষুণি বাতাস লেগে বুকে ঠাণ্ডা লেগে যেতো আর সারা রাত খুক খুক করে কেশে আমার ঘুম সাবাড় করতে!

আমি দেখো আজও তোমার মধ্যেই আটকে আছি। আসলে যদিও তুমি আমায় পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেছো, ভালো থেকো। আর পারলে দোয়া করো যেন তোমায় ভুলে যাই! এই ছিলো তোমার অভিযোগ তাই তো?

আসলে কী বলো তো, আমি একজন নারী, আমি সমাজে বসবাস করি। মেয়েরা ততদিন বাবার রাজকন্যা থাকে, যতদিন তারা ছোট থাকে। যখন তাদের তারুণ্য আসতে থাকে, তখনই তারা হয়ে ওঠে সমাজের বোঝা। মেয়ের বয়স তো হয়েছে বিয়ে দিচ্ছেন না কেন? আর দেখেন নিশ্চই কোনো চক্কর আছে। আঁরে, আমার তো মনে হয়, কোনো সমস্যা আছে...। 

সমাজে এমন চার-পাঁচটা কথা শোনার হাত থেকে বাঁচতেই বাবা-মায়েরা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়। অথবা অনেক সময় তাদেরও মনে হয়, আমার পেছনে এত টাকা ভেঙে লাভ কী? জীবনে কিছুই পারিনি। যা পেরেছি তা হলো অঝোরে কাঁদতে। রাতের আঁধারে, সবার আড়ালে, মুখ চেপে। 

তুমি ঠিকই বলেছো, আমি ভালো আছি। সত্যিই ভালো আছি। আমার ছোট পৃথিবীটা শুধু আমার মেয়েকে ঘিরে, তাকে নিয়ে খুব সুখেই আছি। তুমিও দোয়া করো, যেন ভুলে যেতে পারি তোমাকে। যদিও জানি তা সম্ভব না।

——ইতি

তোমার ব্যর্থ প্রেয়সী                

আরও পড়ুন : যদি কখনো মনে পড়ে একটা চিঠি দিও

এস/ আই. কে. জে/


নারী অভিযোগ

খবরটি শেয়ার করুন