ছবি: সংগৃহীত
পুরোদমে এখন চলছে বর্ষা মৌসুম। খাল-বিল, জলাশয়, নদী-নালাসহ সর্বত্রই পানি থৈ থৈ করছে। পাশাপাশি এই পানিতে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আনা-গোনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সুযোগে শৌখিন মাছ শিকারিরা বিভিন্ন কৌশলে এখন মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠছেন। অনেকেই মাছ ধরতে চাঁই কিনছেন। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌরসদর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে চাঁই বিক্রি জমে উঠেছে। এসব বাজার থেকে হাটের দিনে আশপাশসহ দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে মাছ ধরার চাঁই কিনছেন।
এ উপজেলার মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ, নরসুন্দা নদী, নবাগিয়া বিলসহ নানা খাল-বিল ও জলাশয় প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদী-নালায় বছরের অন্য সময়ে পানি থাকলেও বর্ষা মৌসুমে নদ, নদী, নালা, জলাশয়সহ বিভিন্ন জমিতে পানিতে একাকার হয়ে যায়। এতে পানির সঙ্গে সঙ্গে নতুন পানিতে দেশীয় মাছের আনাগোনা থাকে বেশ। পানি থাকার কারণে নানা ধরনের উপকরণ দিয়ে অনেকে মৎস্য শিকার করছেন।
তবে সব উপকরণের মধ্যে শৌখিন মৎস্য শিকারিদের কাছে চাঁই রয়েছে অন্যতম। স্থানীয় পর্যায়ে সৌখিন মৎস্য শিকারিদের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত মৌসুমী কারিগররা ঘরে বসেই মাছ শিকারের দেশীয় সব উপকরণ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। আর মাছ ধরার চাঁইসহ নানা উপকরণ তৈরি করে অনেকেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সরেজমিন গিয়ে পৌর সদর বাজার, মঠখোলা ও মির্জাপুর বাজারের সাপ্তাহিক হাটে দেখা গেছে, সেখানে অনেক লোকজন চাঁই নিয়ে রাস্তার পাশে বিক্রি করতে বসে আছেন। স্থানীয়সহ বিভিন্ন জায়গার শৌখিন মৎস্য শিকারিরা চাঁই কিনছেন। আকার ও আকৃতি ভেদে এক একটি চাঁই ৩শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরো পড়ুন: সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে বাণিজ্যিক আম চাষ
বুধবার পৌরসদর বাজারে সাপ্তাহিক হাটে চাঁই বিক্রি করতে আসা মঠখোলা এলাকার মো.বকুল মিয়া বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হাট-বাজারে চাঁই বিক্রি করে আসছেন। বর্ষা মৌসুমে ভালো চাঁই এর কদর রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এসব চাঁই তিনি নিজে তৈরি করেন না। এ মৌসুমে চাঁই অগ্রীম অর্ডার দিয়ে পাইকারি হিসেবে তৈরি করিয়ে আনেন। মাছ ধরার চাঁই তৈরিতে বাঁশ, তালের ডাকুর দরকার হয়। তালের ডাকু পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে আঁশ ছাড়াতে হয়। পাশাপাশি বাঁশও পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ওই ভেজা বাঁশ রোদে শুকিয়ে দা দিয়ে চিরে ভাগ ভাগ করে সুবিধামতো চাঁইয়ের দুই পাশ শক্ত করে আটকানো হয়। এক একটি চাঁই আকার বেধে ৩শ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ।
চাঁই তৈরির কারিগর মো. সিরাজ মিয়া বলেন, এ মৌসুমে বৃষ্টিপাত ভালো থাকায় চাঁইয়ের ভালো চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে একটি বাঁশ ৫শ থেকে ৬শ টাকায় কেনা হয়। একটি বাঁশ দিয়ে কমপক্ষে ৪টা চাঁই, বুছরা হয়। দৈনিক তিনটি টি চাঁই তৈরি করা যায়। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।
আবুল কাশেম নামে অপর একজন বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম হওয়ায় চাঁইয়ের কদর বেশ ভালো রয়েছে। দৈনিক ১৫-২০টি চাঁই বিক্রি হয় বলে জানান। বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন চাঁইয়ের দামও বেড়েছে।
চাঁই কিনতে আসা মোকলেছ মিয়া বলেন, আমরা সব সময় পানির অপেক্ষায় থাকি। খাল বিল ও জলাশয়ে পানি থাকায় নানা উপকরণ দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে চাঁই রয়েছে অন্যতম। আগে যেখানে একটি চাঁই দেড়শ থেকে ২শ টাকায় কেনা হতো এখন তা কিনতে হচ্ছে ৩শ থেকে ৮শ টাকায়।
এসি/ আই.কে.জে