বুধবার, ১৭ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১লা শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ-চীন ১২তম এফওসি

দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও কানেক্টিভিটিতে জোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:০০ পূর্বাহ্ন, ২৮শে মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহায়তা দেবে চীন। সীমিত আকারে প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে দুই দেশ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ত্বরান্বিত করতেও ভূমিকা রাখবে দেশটি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসাও করেছে চীন।

গতকাল শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার ১২তম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে।

এ বৈঠকে যোগ দিতে গত শুক্রবার প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় এসেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডেং। শনিবার সকালে হওয়া বৈঠকে নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আজ সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন চীনের এ ভাইস মিনিস্টার।

বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, কানেক্টিভিটি, জিডিআই, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে চীনের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পৌঁছায়। শুরুতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও চীনের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডেং আলাদা বৈঠক করেন। এরপর দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় দুই পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে। দুই দেশের নিয়মিত কর্মকর্তা পর্যায়ের সম্ভাব্য বৈঠক এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অনলাইনে জুয়া ও মাদক চোরাচালান রোধে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। জননিরাপত্তা নিয়ে আলাদা বৈঠক করতে নীতিগতভাবে সম্মত দুই দেশ। বাংলাদেশে সাইক্লোন ও বন্যার সময়ে স্যাটেলাইট চিত্র দিয়ে সহযোগিতার জন্য বৈঠকে চীনকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করে দুই দেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা পাইলট প্রত্যাবাসনে চলমান প্রক্রিয়া চীনকে জানানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে তীব্র বৈরিতার সম্পর্কের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে চীনের কূটনীতি নতুন উচ্চতা পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সংকট সমাধানের মাধ্যমে এখানেও ড্রাগন ডিপ্লোম্যাসির ছাপ রাখতে চায় দেশটি। যে কোনো উপায়ে এ ক্ষেত্রে সফলতা চায় চীন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্য বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার কথা চীন আবারও উল্লেখ করেছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং পুরো অঞ্চলের জন্য লাভজনক হবে বলে বৈঠকে উল্লেখ করেছেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প শুরু করতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, তাতে সাধুবাদ জানিয়েছে চীন। বন্ধু রাষ্ট্রগুলো, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সংযুক্ত করে স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনে উদ্যোগে চীনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্র সচিব।

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে ২৭ প্রকল্পে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। এর মধ্যে আট প্রকল্পে প্রায় ৩৩০ কোটি ডলারের ছাড় হয়েছে। বৈঠকে চীনা ঋণের প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নতুন করে কোনো ঋণ লাগবে কিনা। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ঢাকা।

আরো পড়ুন: তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ আজ

বৈঠকে দুই পক্ষ বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোতে একে অপরের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছে। ‘এক চীন নীতি’তে ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানো হয়। কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গভীর করতে চায় দুই পক্ষই। এ ছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় দুই পক্ষই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সংযোগে আগ্রহ দেখিয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় আসেন। গত এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ওয়াশিংটনে যাওয়ার এক দিন আগে মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত দেং শিজুন ঢাকায় আসেন। এর দুই সপ্তাহ পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য ১৮ এপ্রিল কুনমিং যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।

এম/

 

Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন