ছবি: সংগৃহীত
নারী কর্মকর্তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস, সেখানে নারী শ্রমিকরা কেন ১১২ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন, এই প্রশ্ন রেখে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
সোমবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী ক্লাবে ‘মাতৃত্বের সুবিধা এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সাম্প্রতিক সংশোধন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।
ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফ্লাড), সলিডারিটি সেন্টার এবং আই ল’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় শ্রম আইনের আওতায় প্রসূতিকালীন ভাতা ও যৌন হয়রানি কমিটি বিষয়ক যেই দুটি জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা দায়ের করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ নেওয়া হয়। বর্তমানে শ্রম আইনে আর কিরূপ সংশোধনী বা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ফ্লাডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। ফ্লাডের আইন ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম দুটি জনস্বার্থ বিষয়ক রিট মামলার প্রেক্ষাপট এবং দায়ের করার সময় ও পরে কিরূপ সমস্যার মুখমুখি হন তা তুলে ধরেন।
সলিডারিটি সেন্টারের সিনিয়র প্রোগাম অফিসার আনিন্দিতা ঘোষ যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির নিরপেক্ষ মেম্বারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরার সময় বলেন, কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার সময় নিরপেক্ষ মেম্বার হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ফ্যাক্টরির মালিকের বউ অথবা কর্তৃপক্ষের কোন আত্মীয়, এতে ওই কমিটির বিচার ব্যবস্থা সুষ্ঠু হয়ে ওঠে না। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য আইন ও বিধিমালা থাকলেও তা পালনের ক্ষেত্রে এতই সময় পার করা হয়ে থাকে যে ভুক্তভোগীরা কোনরূপ বিচার পায় না।
সলিডারিটি সেন্টারের সাব্বির হোসেন বলেন, কোন কমপ্লেইন কমিটির সামনে এলে শ্রমিক পক্ষে সাক্ষী পাওয়া যায় না কারণ তারা মালিক পক্ষকে ভয় পায় এবং এ কারণে দেখা যায় যে ৯০ শতাংশ মামলায় মালিকপক্ষ জিতে যাচ্ছে। এছাড়া শ্রম আইন ও সংশোধনীগুলো যেখানে শ্রমিকদের কষ্ট লাঘব করার জন্য বানানোর দরকার ছিল, সেখানে উল্টো তাদের দেওয়া অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শারমিন সুলতানা বলেন, শ্রম আইন কমিটিতে শ্রম আইন প্রণয়ন করার সময় কোনো আইনজ্ঞ বা শ্রম আইনজীবী যারা প্রতিনিয়ত শ্রম আইন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের কমিটি সদস্য হিসেবে রাখা হয় না, যার জন্য এরূপ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, শ্রম আইন প্রণয়ন করা উচিৎ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করার জন্যে নয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলেছেন মহিলা কর্মকর্তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় হবে ৬ মাস, সেখানে মহিলা শ্রমিকরা কেন ১১২ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন? একজন শ্রমিকের কায়িক শ্রম কখনই একজন সরকারি কর্মকর্তার ডেস্ক জব থেকে কম হতে পারে না। এজন্য মহিলা শ্রমিকদেরও মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করে দেওয়া দরকার বলে মনে করেন নাজমা আক্তার। ফ্লাডের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসিনা রশিদ মতবিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্য রাখেন।
একে/