ভিনিসিয়াস জুনিয়র- ছবি: সংগৃহীত
স্প্যানিশ লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের আরো একটি হার। গত রোববার (২১ মে) রাতে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে গিয়ে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের হার রিয়াল মাদ্রিদকে পয়েন্ট তালিকার দুই থেকে ছিটকে ফেলেছে তিনে। রিয়ালকে টপকে দুই নম্বরে উঠে গেছে তাদেরই নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। পরশু রিয়ালের হারের দিনে ওসাসুনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে অ্যাটলেটিকো। তবে রিয়ালের হতাশার হার ছাপিয়ে ম্যাচে বড় হয়ে ওঠে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের বর্ণবাদ প্রসঙ্গ।
প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে গিয়ে রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা আরো একবার বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বর্ণবাদের শিকার ভিনিসিয়াসকেই লালকার্ড দেখিয়েছেন রেফারি রিকার্ডো ডি বুরগোস! একদিকে বর্ণবাদের শিকার, অন্যদিকে সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে ‘লালকার্ড’ প্রাপ্তি-ভিনিসিয়াসের ঘটনা নিয়ে পুরো ফুটবল দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্বয়ং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এগিয়ে এসেছেন, ঘোষণা দিয়েছেন ভিনিয়য়াসের পাশে থাকার। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভাও ভিনির পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শুধু ফিফা সভাপতি বা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নন, মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে, কাইল ওয়াকার, বার্সেলোনার কোচ জাভি হার্নান্দেজসহ বিশ্বের সাবেক-বর্তমানের অনেক তারকা ফুটবলারই ভিনিসিয়াসের পাশে দাঁড়িয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। নেইমার-এমবাপ্পে টুইট করেছেন, ‘ভিনি তুমি একা নও।’ অবশ্য এক-দুই জন ভিনিসিয়াসের বিপক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। লা লিগার সভাপতি হাভিয়ের তেবাস যেমন কাঠগড়ায় তুলেছেন ভুক্তভোগী ভিনিকেই!
স্প্যানিশ সমর্থকরা ভিনিসিয়াসকে বর্ণবাদী গালি দেওয়াটাকে যেন নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে! এই মৌসুমেই প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে গিয়ে অন্তত ৬ বার প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। পরশু তো শুধু ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকরা নন, ভিনিসিয়ুসকে তিতিবিরক্ত করার পথ বেছে নেন ভ্যালেন্সিয়ার খেলোয়াড়রাও। বল ধরলেই তাকে হয় কড়া ট্যাকল করেছে, নয়তো বর্ণবাদী গালি দিয়েছে! ওদিকে গ্যালারি থেকে বর্ণবাদী গালি তো উড়ে এসেছেই। কতই আর সহ্য করা যায়! মেজাজ হারিয়ে ভিনিও তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ভিনিকে কেন্দ্র করে ঘটনার কারণেই ম্যাচে একাধিকবার ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েছেন দুই দলের ফুটবলাররা। এক-দুই বার মৃদু হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
এই প্রতিবাদ করতে গিয়েই ম্যাচে দুই বার হলুদকার্ড পান ভিনি। যা মূলত লালকার্ড। ভিনি যখন লালকার্ড পেয়ে হতাশায়-কষ্টে গজগজ করতে করতে মাঠ ছাড়েন, ম্যাচে তখন যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটের খেলা চলছিল। ম্যাচে তার পরও পুরো ১০ মিনিট খেলা চলেছে। মানে বার বার খেলা বন্ধ থাকায় ইনজুরি সময় দেওয়া হয়েছিল ১৭ মিনিট! ম্যাচ শেষে ভিনিসিয়াস সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিশাল এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে মনের ক্ষোভ-দুঃখ-কষ্ট উপড়ে দিয়েছেন। সমস্ত ঘটনার জন্য তিনি দায়ী করেছেন লা লিগা কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনকে।
আরো পড়ুন: আইসিসি থেকে সম্মাননা পেলেন মিরাজ
তিনি লিখেছেন, ‘এটাই প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার নয়। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ লা লিগা কর্তৃপক্ষ, স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটা মনে করে এবং দলগুলোও নিজেদের সমর্থকদের এমনটা করতে সাহস জোগায়! বলতে বাধ্য হচ্ছি, আজ স্পেন ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিনির এই সমালোচনার জন্যই হয়তো তাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন লা লিগা সভাপতি তেবাসকে। ভিনির টুইটের জবাবে তেবাস পালটা টুইটে দাবি করেছেন, ভিনিসিয়াস বর্ণবাদ বিষয়ে তাদেরকে যথাযথ সহায়তা করছেন না। তেবাসের সেই টুইটের জবাবেও আবার পালটা টুইটে জবাব দিয়েছেন ভিনি।
এম/