শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোটের মাঠে বেড়েছে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০২:২৫ অপরাহ্ন, ২৪শে ডিসেম্বর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এবার ভোটের মাঠে নেমেছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী প্রার্থী। গত নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ।

আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটের লড়াইয়ে ৩০০ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৮৯৫ প্রার্থীর মধ্যে নারী রয়েছেন ৯৪ জন। এর মধ্যে ২৬ জন লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আর নির্বাচনে আসা ২৭টি রাজনৈতিক দলের ১৪টি মনোনয়ন দিয়েছে ৬৮ নারীকে।

অর্থাৎ মোট পুরুষ প্রার্থীর তুলনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন ৫ শতাংশ নারী। সেইসঙ্গে ভোটের মাঠে আছেন ট্রান্সজেন্ডার দুই প্রার্থী।

নির্বাচনে প্রধান দল আওয়ামী লীগ নারী প্রার্থী করেছে ২০ জনকে। জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ৯ জন করে, তৃণমূল বিএনপির ৬ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ৩ জন করে এবং গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ২ জন করে নারী প্রার্থী রেখেছে।

আরো পড়ুন: দেশের রাজনীতিতে বিএনপিকে বিষফোড়া বললেন কাদের

এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি একজন করে নারী প্রার্থী দিয়েছে।

পুরুষের বিপরীতে নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ কমের পেছনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশকেই কারণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক শান্তনু মজুমদার বলেন,  “দল থেকে যখন মনোনয়ন দেওয়া হয়, তখন এই প্রার্থী জিতবে কিনা- সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়।”

গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নারী নেতৃত্বের হাতেই থাকছে। সংসদ ও সংসদের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারীদের দেখা যাচ্ছে। তবে সামগ্রিক রাজনীতিতে নারীরা পিছিয়েই থাকছে।

সংরক্ষিত আসনে প্রতিনিধিত্ব করতে ৫০ জন নারী জাতীয় সংসদে যান। তবে জনরায় নিয়ে এর অর্ধেক নারীও কোনো সংসদে যেতে পারেননি। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে ৩৯ জন নারী প্রার্থী অংশ নেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন জয়ী হয়ে সংসদে যান।

ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনে ৩৬ নারী প্রার্থীর আটজন, সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৮ নারী প্রার্থীর ছয়জন, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৯ নারীর মধ্যে ১৯ জন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯ নারী প্রার্থীর ১৮ জন নির্বাচিত হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৯ আসনে জনপ্রতিনিধি হতে লড়েন ৬৮ নারী, যাদের মধ্যে রেকর্ড ২২ জন সরাসরি নির্বাচিত হয়ে সংসদে যান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, “ঘরের বাইরে নারী আসার ক্ষেত্রে আমাদের ভালোই অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যে নারীদের রাজনীতিতে দেখা যায়, তাদের বিরাট অংশ পরিবার থেকে উঠে আসে।”

সমাজ ও রাজনৈতিক দলের ভেতরে নারী বিদ্বেষী মনোভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যে নারীরা ফাইট করে দলের জায়গায় যান, তাদের প্রত্যেককে যখন আটকানো যায় না, তখন নারী উইংয়ে ঠেলে দেওয়া হয়। ফলে তারা মূল দলে জায়গা করে নিতে পারেন না।

“সমাজ ও দলের ভেতরের মানসিকতার পবির্তন না হলে এই অবস্থার কোনও উন্নতি হবে না।”

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন ১৮ জন নারী। এবার দলটি ২০ নারীকে নৌকার টিকেট দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান  বলেন, “নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। নারীদের সমাজের বিভিন্ন পেশায় উচ্চপদস্থ করার প্রয়াস নিয়েই তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচনের জন্য অনেক নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৬ জন নারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।

সংসদে সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি ও ঢাকা-১৪ আসনের এবারের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, “সব শ্রেণির ভোটারই আমাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। নারী ভোটারদের সমর্থন তাকে নির্বাচনে এগিয়ে রাখবে। এই এলাকা (ঢাকা-১৪) আমার। আমি এখানে অনেক কাজ করেছি। আমার পাশে সবাই রয়েছেন। আমি তাদের ভোটে ইনশাল্লাহ জয়লাভ করব।”

ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেরীফা কাদেরের প্রত্যাশা ভোটের লড়াইয়ে জিতবেন তিনিও। তার কথায়, “শুধু লাঙ্গল না, দল-মতের উর্ধ্বে উঠে সবাই আমাকে ভোট দেবে, এই আশা করি।”

এবারের নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডার দুই প্রার্থীও ভোটে লড়ছেন। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনের আনোয়ারা ইসলাম রানী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। আর গাজীপুর-৫ আসনের উর্মি বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী হয়েছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, “নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ হিসেবেই তারা নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন। নারী প্রার্থী রাখতে হবে এটার জন্য নয়, আমরা যদি আরও বেশি নারী প্রার্থী পেতাম তাহলে আরো দিতাম। আমাদের সমাজে এখনো নারীরা ‘অনগ্রসর’। আগের চেয়ে অগ্রসর হয়েছে ঠিক, কিন্তু যতটা হওয়া উচিত ততটা এখনো হয়নি।”

এইচআ/ আই. কে. জে/ 


নির্বাচন ট্রান্সজেন্ডার নারী প্রার্থী

খবরটি শেয়ার করুন