সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্রমণ করে জ্ঞান অর্জন করি, জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করি

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:১৯ অপরাহ্ন, ১৬ই অক্টোবর ২০২৩

#

মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম 

শত ব্যস্ততার  মাঝেও কার না ভালো লাগে একটু ঘুরে বেড়াতে। আমরা কেন ভ্রমণ করি? ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা হয় বলেই। শরীর এবং মনের প্রফুল্লতা অর্জনের জন্যও। যেহেতু রোমাঞ্চকর স্থানে সময় কাটানো ভালোলাগার বিষয়। মনে স্বস্তিও আনে। কেননা ভ্রমণেও আছে নানান রকমের উপকারিতা। সেটা স্বাস্থ্যের জন্যও।

ভ্রমণ আপনাকে লক্ষ্য অর্জনেও সাহায্য করবে। ভ্রমণ করলে আপনি কিছুটা ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী হবেন। মনে করুন, পাহাড়ে ওঠার লক্ষ্য অর্জন করলে আপনি হয়তো আবার একটি লক্ষ্য ঠিক করে নিবেন। এভাবে লক্ষ্য অর্জন আপনাকে দিতে পারে আত্মবিশ্বাস এবং সফলতা।

ঘোরাঘুরি করতে গেলে আপনাকে আরো বেশি ধৈর্যশীল হতে হবে। চাওয়ামাত্রই সব হয়তো হাতের কাছে চলে আসবে না। কেননা বের হলেই দেখবেন, কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। খাবারের জন্য রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এসব পরিস্থিতি আপনাকে সামাল দিতে হবে।

মনের পাশাপাশি ভ্রমণ দেহের সুস্থতার উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অবশ্য ভ্রমণের সময় ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভ্রমণ শারীরিক অনুশীলনে অভ্যস্ত হওয়ার একটি দুর্দান্ত সুযোগকে উন্মুক্ত করে। এর অর্থ হতে পারে সারাদিন ধরে শহরের চারপাশে হাঁটা বা কায়াকিং, হাইকিং এবং সাঁতার কাটা। ভ্রমণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

এটি ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিকে মোকাবেলার জন্য তার ভেতরকার সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করে। চিরচেনা বৃত্তবন্দি-সদৃশ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসাটা বাস্তব দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিখিয়ে দেয় যে, সবকিছুরই একটি বিকল্প আছে।

ভ্রমণ এমন একটি অবস্থা যা প্রতিটি ইন্দ্রিয়কে স্পর্শ করে। নতুন দৃশ্য আর খাবার তো আছেই; তার পাশাপাশি নতুন সুর, নতুন গন্ধ এমনকি নতুন সম্পর্ক একটি শক্তিশালী সংবেদনশীলতার জন্ম দেয়। এগুলো যে কোন সমস্যা সমাধানের সময় নতুনভাবে ভাবনার রসদ যোগায়। অভিনব যুক্তি, বিশেষায়িত পরিকল্পনা, দ্রুত শিখে নেয়ার প্রবণতা সব কিছু নতুন সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত করে। এক কথায় যত বেশি ভ্রমণ করা হবে, ভ্রমণকারি তত বুদ্ধিমান হবেন।

ভ্রমণ মাত্রই বৈচিত্র্যের অবগাহন। দৈনন্দিন জীবনের তাড়াহুড়ো থেকে বেরিয়ে আসাতে এর কোন বিকল্প নেই। ঘড়ির কাটায় বাঁধা জীবন থেকে মুক্ত করে দেশ-বিদেশ ঘোরাঘুরি এক উন্নত জীবনের স্বপ্ন যাপন করতে শেখায়। যারা ৯ থেকে ৫টার গোলক ধাঁধাঁর নৈরাশ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাদের একমাত্র ওষুধ ভ্রমণ।

এখানে ভারসাম্যে নিয়ে আসতে হবে জীবনে একের পর এক অর্জনের পেছনে ছুটে যাওয়াটাকে। নতুবা জীবনের আসল উদ্দেশ্য হিসেবে শান্তিতে বেঁচে থাকা আর আর্থিক উন্নতির মাঝে এক বিশাল সীমারেখা রচিত হবে। তখন জীবনের শেষ প্রান্তে হাজার অর্জনের পরে একরাশ অপ্রাপ্তির কষ্ট থেকে যাবে।

দেশ-বিদেশ ঘোরা মানে নতুন মানুষের সাথে পরিচিতি; নতুন ভাষার সাথে পরিচিতি। অজানা দেশটিতে চলাফেরা করার তাগিদে অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রকৃতিগতভাবে শিখে নিতে হয় সে দেশের ভাষা। এভাবে যত দেশ ঘোরা যায়, তত ভাষা সম্পর্কে জানা যায়।

সর্বোপরি, ভ্রমণের উপকারিতা নতুন এক জীবনধারণের মাইলফলক স্থাপন করে। দেশ-বিদেশ ঘোরার ব্যাপারে যে তথাকথিত ভয়টি কাজ করে তা হলো ঘুরে বেড়াতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকলে নিঃসন্দেহে বেশি দেশ ভ্রমণ সম্ভব। কিন্তু এখানে ভয়ের ব্যাপারটি আসে ভূল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সমাজে সর্বজনবিদিত তথাকথিত জীবনের জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন বড় ত্যাগ স্বীকারে, বড় বিনিয়োগে। তা করতে যেয়ে এমনকি কখনো প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার পরিক্রম হয়।

এক্ষেত্রে ভ্রমণ নিছক বিনোদন হিসেবেই বিবেচিত হয়। কিন্তু ভ্রমণকে উপজীব্য জীবনও হতে পারে সেই সমাজ স্বীকৃত উন্নত মানের। তার জন্য সেই বিনিয়োগ, সেই ত্যাগ-তিতিক্ষাগুলো পরিকল্পিত উপায়ে ধাবিত করতে হবে ভ্রমণকে উদ্দেশ্য করে।

আই.কে.জে/

ভ্রমণ জ্ঞান

খবরটি শেয়ার করুন