শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** অনিবার্য কারণ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনি মাঠে থাকবে: নজরুল ইসলাম খান *** নিবন্ধন পাচ্ছে ‘আমজনতার দল’, প্রতীকের বিষয়ে যা জানা গেল *** এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হতে পারে, জুবাইদা রহমান ঢাকায় আসছেন *** খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে আইজিপি ও ডিএমপির কমিশনার *** আগামীকাল লন্ডনে নেওয়া হতে পারে খালেদা জিয়াকে *** তারেক রহমান এসএসএফ নিরাপত্তা পাবেন কিনা, যা জানালেন সৈয়দা রিজওয়ানা *** কিশোরগঞ্জের ইউএনও হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক লাক্স সুন্দরী *** ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ‘বর্ণবাদের দুর্গন্ধ’ *** আগামীকাল সকালে দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন জোবাইদা রহমান *** তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ দিয়ে বৈঠকে ডেকেছে সরকার

মাংসের দাম কমাতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়

ডেস্ক নিউজ

🕒 প্রকাশ: ০১:১৫ অপরাহ্ন, ২৪শে মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

বিগত কয়েক বছর ধরেই হু হু করে বাড়ছে মাংসের দাম। বিশেষ করে ২০২২ সালে সব ধরনের মাংসের দাম বেড়ে হয় আকাশচুম্বী। সরকারের নানা উদ্যোগেও কোনোভাবেই বাগে আসছে না বাজার। এমনকি যেকোনো উৎসবকেন্দ্রিক দাম থাকে আরও বাড়তি। এ অবস্থায় কয়েক বছর ধরেই গরু-খাসির মাংসের দাম কমাতে নানা উদ্যোগ নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে সেসব উদ্যোগে তেমন ফল না মেলায় এবার মাংসের দাম কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বারস্থ হয়েছে মন্ত্রণালয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে মাংস ও মাংসজাত পণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সই করা এক চিঠি পাঠানো হয়েছে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে। ওই চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি মেনে নিয়ে মাংসজাত পণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা আগাম আয়করে (এআইটি) ছাড় পাবেন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আগাম আয়কর নেমে আসবে ২ শতাংশে, বর্তমানে যা ৭ শতাংশ।

তবে আগাম আয়কর মাংসের মূল্যবৃদ্ধির একমাত্র কারণ নয়। মূল্যবৃদ্ধির জন্য গোখাদ্যের অতিরিক্ত দাম, বিদেশ থেকে অবৈধভাবে মাংস আমদানি, বাজার নজরদারি ও মাংস বিক্রির সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহির অভাবকে দায়ী করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম সর্বোচ্চ, এমনকি পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮শ টাকার ওপরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১,১০০ থেকে শুরু ১,৩০০ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাল, ডাল, গম, ময়দা, চিনি, তেল, আলু, খেজুর, রসুন, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, পাট, সুতাসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ২ শতাংশ উৎসে কর আদায় করে রাজস্ব বোর্ড। এই তালিকায় মাংস ও মাংসজাত পণ্য অন্তর্ভুক্ত হলে আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান তৈরি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মাংসই ইনফরমাল চ্যানেলে বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি হয়। বর্তমানে মাংসের দোকান ভ্যাট, ট্যাক্সের আওতার বাইরে। তবে ধীরে ধীরে তারাও রাজস্বের আওতায় আসবে। কয়েক বছর ধরেই আগাম আয়কর সম্পূর্ণ মওকুফের দাবি আসছে। তবে এবার আগাম আয়কর কমানোর বিষয়ে চিঠি এলো প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কর সুবিধা না পাওয়ায় মাংস উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। চিঠিতে মন্ত্রণালয় এনবিআরকে জানায়, ‘মাংস উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ থেকে ১২ শতাংশ গ্রস মার্জিনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন মাংসের ব্যবসায় এক থেকে ৩ শতাংশের বেশি নিট প্রফিট করা সম্ভব নয়। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মাংস ও মাংসজাত পণ্য সরবরাহের ওপর সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ উৎসে আয়কর নেওয়া হচ্ছে। এ খাতের নিট মার্জিনের সঙ্গে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের রাজস্ব আয়ে ভূমিকা রাখছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান কর সুবিধা না পাওয়ায় সম্ভাবনাময় এ খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আগামী বাজেটে মাংসজাত পণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি বিষয়টি বিবেচনা করবে এনবিআর।

আগাম আয়কর কমানোর দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে হালাল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলছে, এ খাতের ব্যাপ্তি বাড়ানো যাচ্ছে না। আগাম আয়কর এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় আগাম আয়কর সম্পূর্ণ মওকুফ বা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা দরকার। আগাম আয়করের ফলে সম্ভাবনাময় এ খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সংগঠনটি জানায়, মাংস উৎপাদনে বড় বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশে একাধিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট স্থাপন করেছিল। তবে অতিরিক্ত করের বোঝা ও কোনো রকম কর অব্যাহতির সুবিধা না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন:  পেঁয়াজের মজুত পর্যাপ্ত, দাম বাড়ার কারণ জানেন না ব্যবসায়ী নেতারা

হালাল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বেঙ্গল মিটের সিইও এ এফ এম আসিফ বলেন, দেশের মাংসের চাহিদার সিংহভাগই আসে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই রাজস্ব আওতার বাইরে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাংস উৎপাদন এতদিন ছিল না।

তিনি বলেন, কৃষি আর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আমাদের এখানে আলাদা হয়ে গেছে। সব দেশেই মাংস কৃষির মধ্যেই থাকে। এটার যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেন ছিল না, এর সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতাও ছিল না। এখন আমরা কাজ করছি। কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টা এসেছে। তবে মাংসজাত পণ্য বিক্রি করে ৫ থেকে ৬ শতাংশ নিট প্রফিট হয় না। সেখানে ৭ শতাংশ আগাম আয়কর অনেক বেশি। এত বেশি আগাম আয়কর এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আগাম আয়কর বিলুপ্ত হলে মাংসের দাম কিছুটা কমবে দাবি করে এ এফ এম আসিফ বলেন, মাংস ব্যবসায়ীরা কখনো করের আওতায় ছিলেন না, ফলে এতদিন বিষয়টি নজরে আসেনি। এখন আগাম আয়কর কমলে যারা কর দিয়ে ব্যবসা করেন তাদের ক্ষেত্রে দাম কমানোর একটা সুযোগ থাকবে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান  বলেন, আগাম আয়কর অবশ্যই কমানো দরকার। এমনিতেই মাংসের দামের কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। গোখাদ্যের দাম ও মাংস উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। ফলে মাংসের দাম কমাতে হলে সরকারকে অবশ্যই ভ্যাট, ট্যাক্স কমাতে হবে।

এসি/ আই. কে. জে/

মাংস জাতীয় রাজস্ব মন্ত্রণালয়

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250