বুধবার, ১৭ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১লা শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরীফ শাসনামলে পাকিস্তানের অর্থনীতির বিস্তর পতন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৭ অপরাহ্ন, ২৭শে মে ২০২৩

#

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ

ঋণ খেলাপি এড়াতে আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় গত অর্থবছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ০.৩ শতাংশ নেমে এসেছে।

গত চার বছরে পাকিস্তানের মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে মাত্র ০.২৯ শতাংশ, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত জাতীয় উৎপাদনের সর্বনিম্ন বৃদ্ধি। এ পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেশের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে প্রতিফলিত করে, যা দেশের ২৫০০ লাখ মানুষের চাহিদা মেটাতে অপর্যাপ্ত। 

বন্যায় কৃষিজমির উপর মারাত্মক প্রভাবের সত্ত্বেও কৃষি খাতে ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু অপরদিকে, শিল্প খাত ২.৯৪ শতাংশ নিচে নেমে এসেছে। 

সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। এছাড়াও ৫৯ বছরের মধ্যে প্রথমবার দেশটি সর্বোচ্চ ৩৬.৪ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছে।

গত বুধবার, জাতীয় একাউন্টস কমিটি একটি বৈঠকে বসে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অনুমোদন করে, যার মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত। পরিকল্পনা সচিব জাফর আলী শাহ এ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে চুক্তি পাওয়ার আশায় রুপির অবমূল্যায়ন এবং ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।

শেষ পর্যন্ত আইএমএফের কর্মসূচিও পুনরুজ্জীবিত করা যায় নি এবং দেশের অর্থনীতিকেও বিপদের হাত থেকে বাঁচানো যায় নি।

২০২২-২৩ সালের জন্য অস্থায়ী গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট (জিডিপি) বৃদ্ধির হার ০.২৯ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে বলে জানা যায়৷ তবে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে মতবিরোধের কারণে সরকার এক সপ্তাহে চারবার এনএসি সভা স্থগিত করেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ, নাদিম জাভেদ বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধিতে মন্দা চলছে, এটি অর্থনীতিতে সামগ্রিক মন্দা নয়।

সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং আকস্মিক বন্যার কারণে অর্থনৈতিক উৎপাদনে ব্যাপক মন্দা দেখা যায়। উল্লেখ্য, জিডিপি হলো এক বছরে উৎপাদিত সমস্ত পণ্য ও পরিষেবার আর্থিক মূল্য।

যেখানে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছিল, সেখানে ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের অনুমান ঠিক এমনটাই ছিল। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ০.২ শতাংশ থেকে ০.৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির হারেরই পূর্বাভাস দিয়েছিল। অন্যদিকে পিটিআই শাসনের শেষ বছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ।

গত বছর, তেহরিক-ই-ইনসাফ সরকারের আমলে গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার (৬.১ শতাংশ) ছিল পাকিস্তানের। এর আগে পিএমএল-এনের শাসনকালে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল দেশটি। ২০১৭-১৮ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের এ প্রবৃদ্ধি মূলত বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

বন্যায় ব্যাপক হারে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়, মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্যাভাবে পড়ে। এ সত্ত্বেও গত অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৩ শতাংশ।

পিবিএস-এর প্রধান পরিসংখ্যানবিদ নাঈম উল হক জানান, ২৭৬ লাখ টন গম এবং ৯১ লাখ টন আখের সফল উৎপাদনের ফলে কৃষি খাতের এ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়।

৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২.৯৪ শতাংশ। 

সরকার নিজেই আমদানি খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়। কাঁচামালের অভাবে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। 

গত অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৮ শতাংশ। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশায় সুদের হার রেকর্ড ২১ শতাংশে বৃদ্ধি করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যা ইতিমধ্যে ৩৬.৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে।

সরকার সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৪ শতাংশ। কিন্তু অস্থায়ী সংখ্যা অনুসারে, পরিষেবা খাত ০.৯ শতাংশের প্রান্তিক বৃদ্ধির হার দেখিয়েছে।

Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন