সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিন্ডিকেটে অসহায় মানুষ, গরিবকে রক্ষা করবে কে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:৪০ অপরাহ্ন, ৪ঠা জুলাই ২০২৩

#

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। একে তো জ্বালানি তেল, পানি, গ্যাসের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, তার ওপর যথাযথ যুক্তি ছাড়াই নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় হাহাকার চলছে। খোদ বিক্রেতারাই বলছেন, ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাইকারি দামে কিনতে গেলে রসিদ দেওয়া হয় না।

অধিক দামে পাইকারদের কাছ থেকে কিনে খুচরা বিক্রি করতে গেলে জনরোষের শিকার হতে হয়। ফলে তেল-চিনির মতো অনেক পণ্যই তারা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার জনগণের কথা চিন্তা করছে না।

এর আগে সরকারের একাধিক মন্ত্রী সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করলেও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। বরং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা কতটা রয়েছে তা সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে।

সংসদে দেওয়া বক্তব্যে জনদুর্ভোগ লাঘবে কোনো শক্ত পদক্ষেপের কথা তো উঠে আসেইনি, বরং সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে জনগণকেই ভুগতে হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

এমনিতেও আমাদের দেশে কারণে-অকারণেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে আমরা দেখে থাকি। কোনো অজুহাত পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কখনো রোজা, কখনো ঈদ বা কখনো জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে-পরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যেন এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ অশুভ প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। তবে এ প্রবণতা এখন বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। বলতে গেলে, নিত্যপণ্যের বাজারে অর্থনীতির নিয়মের বদলে এখন সিন্ডিকেটের বিধিবিধান কার্যকর রয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বেআইনিভাবে এ চক্র লাভবান হলেও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও এর বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। উল্টো তারা নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে।

বাজারে আসা মধ্য কিংবা নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকেরা বলছেন, যাদের দিনে ৫০০ টাকাও আয় নেই, তারা বাজারে এসে শুধু ঘুরে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। বিক্রেতারাও স্বীকার করে বলছেন, যাদের সীমাহীন আয় আছে শুধু তারাই দামাদামি না করে ব্যাগ বোঝাই করে বাড়ি ফিরতে পারছেন।

তাহলে এ বৈষম্য হ্রাসে করণীয় কী? জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার যখন দ্রব্যমূল্যের রাশ টানতে অসহায়, তখন এ বৈষম্য হ্রাসে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে? বাস্তবতা বলছে, সরকার চাইলে শ্রেণিবৈষম্য হ্রাস তো বটেই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নজির স্থাপন করতে পারে।

এজন্য দরকার সদিচ্ছা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, মাঠ প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে নিত্যপণ্য নিয়ে কারা কারসাজি করে, তাদের শনাক্ত করেছে। এ সম্পর্কিত একাধিক তালিকা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে। সরকার এসব সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অস্থির বাজারকে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে-এটাই প্রত্যাশা।

এসি/ আই. কে. জে/

সিন্ডিকেট উত্তর

খবরটি শেয়ার করুন