শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নির্দশন

সিরাজগঞ্জে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ নবরত্ন মন্দির

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, ২৩শে জুলাই ২০২৩

#

হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির - ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব হিন্দু মন্দির দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর অন্যতম একটি এই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। হিন্দু স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন কারুকার্যমন্ডিত নবরত্ন মন্দিরটি উঁচু একটি বেদীর উপর নবরত্ন পরিকল্পনায় নির্মিত, মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৫.৪ মিটার এবং প্রস্থে ১৩.২৫ মিটার। ক্রমহ্রাসমান তিনতলা বিশিষ্ট, এই স্থাপনার উপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। মূল মন্দিরের বারান্দার বাইরের দিকে ৭টি এবং ভিতরের দিকে ৫টি খিলান বা প্রবেশ পথ। মন্দিরের মূল কক্ষটি বেশ বড়। নীচতলায় ২টি বারান্দা বেষ্টিত একটি গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের পূর্ব ও দক্ষিন দিকে ২টি প্রবেশ পথ রয়েছে। মন্দিরের ২য় তলায় কোন বারান্দা নেই। ভিতর থেকে মূল ভবনের উপরের ছাদ গোলাকার গম্বুজে আচ্ছাদিত। বর্গাকার এই মন্দিরের আয়তন ১৫ দশমিক ৪ বর্গমিটার। একসময়ে মন্দিরে নয়টি চূড়া ছিলো বলে নবরত্ন মন্দির হিসেবে এটি পরিচিতি পায়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মন্দিরটির দায়িত্ব নেয়।  আর এরপর পর থেকে এটি পর্যটন কেন্দ্রী হিসেবে পরিচিত লাভ করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি প্রতিষ্ঠাকালে এখানে কোনো শিলালিপির অস্তিত্ব ছিল না বলে এর নির্মাণকাল সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেন না। তবে লোক মুখে শোনা যায় মন্দিরটি বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খানের সময় রামনাথ ভাদুরী নামের একজন তহশীলদার ১৭০৪ থেকে ১৭২৮ সালের মধ্যে নির্মাণ করেন। নবরত্ন মন্দিরটি স্থানীয়ভাবে দেলমঞ্চ নামেও পরিচিত।


নবরত্ন মন্দির - ছবি: সংগৃহীত

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী,  মন্দিরটি ১৫ দশমিক ৪ মিটার দীর্ঘ এবং ১৩ দশমিক ২৫ মিটার উঁচু। শক্ত একটি মঞ্চের ওপর স্থাপিত মন্দিরের আয়তন ১৫ বর্গমিটার।  তিন তলা বিশিষ্ট মন্দিরটি ওপরে মোট ৯টি রত্ন বা চূড়া রয়েছে। যদিও চূড়াগুলো এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ৯টি চূড়ার কারণে মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে নবরত্ন। এর নিচতলায়  দুটি বারান্দা বেষ্টিত একটি গর্ভগৃহ আছে। বারান্দার বাহিরের দিকে সাতটি এবং ভেতরের দিকে পাঁচটি খিলান প্রবেশ পথ আছে। গর্ভগৃহের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে দুটি প্রবেশ পথ রয়েছে।  ইট, চুন, সুরকি দিয়ে নির্মাণ করা নবরত্ন মন্দিরটি বাংলাদেশের সবচেয় বড় নবরত্ন মন্দির।

প্রতিষ্ঠাকালে মন্দিরটি পোড়া মাটির চিত্রফলক দ্বারা সজ্জিত ছিল। কালের বিবর্তনে সাজসজ্জাগুলো অনেকটাই ম্নান হয়েছে। তবে মন্দিরের গায়ে এখনও কিছু চিত্রফলক বা পোড়া মাটির নকশা লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরটির সামনে প্রায় দুই একর জায়গা রয়েছে। সেখানে  আরও একটি ছোট শিব মন্দির ও দুইচালা মন্দির রয়েছে। ছোট মন্দিরটিকে স্থানীয়ভাবে মুড়া বলা হয়। এই মন্দিরে একটি শিব মূতি রয়েছে। মূল নবরত্ন মন্দির এবং দোচালা মন্দিরে কোন দেব দেবীর মূর্তি নেই। মুড়াতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় শিব মূর্তির পূজা অর্চনা করে থাকেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বেশ কিছু দিন আগে মূল নবরত্ন মন্দিরের কিছু সংস্কার করেছিল। এসময় মন্দিরের জায়গার চারদিকে সীমানা প্রচীর নির্মাণ করায় মন্দির অঙ্গন এখন বেশ সুরক্ষিত। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বগুড়া আঞ্চলিক অফিস থেকে মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী আসেন। তাছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য দুই কিলোমিটার লম্বা একটি পাকা সড়ক তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে যানবাহন নিয়ে সহজেই মন্দিরে আসা যায়। তবে মন্দির অঙ্গনে একটি বাগান থাকলে দর্শনার্থীদের জন্য আরও আকর্ষনীয় হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।  

আরো পড়ুন: বর্ষায় ভ্রমণের যত উপযুক্ত জায়গা

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন জানান, নবরত্ন মন্দির পরিদর্শনে আসা লোকজনকে উপজেলা প্রসাশন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যলয়ের সহকারী প্রত্নতত্ত্ব প্রকৌশলী সাইদ ইনাম তানভিরুল জানান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মন্দিরের দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েকবার সংষ্কার করেছে। তবে সংষ্কার উপযুক্ত পরিমাণ অর্থের অভাবে প্রয়োজন অনুসারে করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে মন্দির অঙ্গনে দর্শনার্থীদের জন্য  বিশ্রমাগার, আধুনিক ওয়াশ ব্লক ও দৃষ্টিনন্দন বাগান তৈরির পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ইতোমধ্যে প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। 

এম/


হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ স্থাপত্য শৈলী

খবরটি শেয়ার করুন