সোমবার দুপুরে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল - ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের দিন রাজধানীতে যুবলীগের সমাবেশের মাধ্যমে সরকার সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। কোনও ধরনের সংঘাত হলে এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। সরকারি দলকে তাদের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তনের আহ্বান করেন মির্জা ফখরুল।
সোমবার দুপুরে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী এমপিরা যে ভাষায় কথা বলে তা কোনো ভাষা হতে পারে না। এগুলো সন্ত্রাসী ভাষা। তারা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। তবে জনগণ এবার রুখে দাঁড়াচ্ছে। সব শ্রেণি পেশার মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে। যুগপৎ-এর বাইরেও অনেক দল আছে যারা বলছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেজন্যই আমরা ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মহাসমাবেশ কিন্তু হঠাৎ করে আসেনি। গত ১৪/১৫ বছর ধরে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছে। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে ব্যবস্থা দেশের মানুষ মেনে নিয়েছিলো এবং সংবিধানে সেটা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সরকার সেটি আদালতকে ব্যবহার করে বাতিল করেছে। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে বলা হয়েছে- পরবর্তী দুটি নির্বাচন দেশের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে। আসলে এই সরকার অবৈধ অনির্বাচিত। যার প্রমাণ ২০১৪ সালের বিনাভোটের নির্বাচন। ২০১৮ সালেও তারা নিশিরাতে একতরফাভাবে নির্বাচন করেছে। এভাবে তারা দেশের গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি, মানবাধিকার সবকিছু ধ্বংস করেছে। গুম খুন মানুষ হত্যা এই সরকারের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে ফের গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এভাবে তাদেরকে হয়রানি করছে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা ধ্বংস করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকায় মহাসমাবেশের বিষয়ে আমরা ডিএমপি কমিশনারের কাছে জানিয়েছি। আশা করি, মঙ্গলবারের মধ্যে ভেন্যুর বিষয়টি জানাতে পারবো এবং কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বলবো- আমাদের আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। এখানে আপনাদেরও সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। কারণ আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ সত্যিকার অর্থেই ফ্যাসিস্ট দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু অবৈধ সরকার ভালোভাবে জানে তারা অবৈধ। তারা টিকে থাকার জন্য মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তারা আমাদের সাংবিধানিক যে অধিকার কথা বলা ও লেখার হরণ করেছে।’
আরো পড়ুন: আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না: ওবায়দুল কাদের
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, মো. আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রাহমান শিমুল বিশ্বাস, এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাক মিয়া, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, বেনজীর আহমেদ টিটো, আবদুল খালেক, মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, গাজীপুর জেলার সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি আফরোজা খানম রীতাসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ। এরআগে নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এম/