ছবি: রয়টার্স।
এই গরমে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। না হলে দেখা দিতে পারে পানিশুন্যতা। চিপস খেতে বেশ লাগে। তবে এই খাবার পানিশূন্যতাও তৈরি করে।
পিপাসা মেটানোর জন্য পানি সবচেয়ে ভালো। তারপরও গরমে নানান রকম ঠাণ্ডা পানীয় পান করে মন প্রাণ জুড়ানো যায়। তবে অনেক খাবারে থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরকে পানিশূন্য করে ফেলতে পারে।
এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন নিবাসী পুষ্টিবিদ ক্রিস্টিনা ম্যানিয়ান বলেন, “আমাদের দেহের প্রায় ৬০ ভাগ পানি। আর এই জরুরি উপাদানের যদি ঘটতি হয় তবে আমরা ঠিক মতো কোনো কাজই করতে পারবো না।”
তাই গরমের সময় খাবারে থাকা উপাদানের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ, যাতে সেগুলো শরীরকে পানিশূন্য করে ফেলতে না পারে।
পানীয় ও খাবারে থাকা যেসব উপাদান পানিশূন্যতা তৈরিতে ভূমিকা রাখে-
অতিরিক্ত সোডিয়াম
এই খনিজ যে দেহে পানিশূন্যতা তৈরি করে সেটার কথা অনেকেই শুনে থাকবেন। আর লবণ থেকেই পাওয়া যায় সোডিয়াম। তাই যাদের অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস আছে খাবারে তাদের পানিশূন্যতায় ভোগার ঝুঁকিও বাড়ে।
ক্রিস্টিনা ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “এই খনিজ রক্তধারা ঘন রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তের ক্ষারীয় ও লবণাক্ততার ওপর প্রভাব ফেলে। শরীর তখন কোষ ও রক্তে লবণাক্ততার ভারসাম্য আনার জন্য, কোষ থেকে পানি এনে রক্তের লবণাক্ততার পরিমাণ স্বাভাবিক করতে বা কমাতে চেষ্টা করে। এর ফলে শুধু রক্তচাপই বাড়ে না, পাশাপাশি দেখা দেয় পানিশূন্যতা।”
অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে
উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাদ্যাভ্যাস বর্তমানে জনপ্রিয় হলেও, এই উপাদান বেশি খাওয়া হলে পানিশূন্যতায় ভুগতে হতে পারে।
এই প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট শরীরে গিয়ে ভাঙার সময় নাইট্রোজেন তৈরি করে। আর অন্যান্যা পুষ্টি উপাদানের তুলনায় সেটা বিপাক করতে দেহকে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতে হয়।
এছাড়াও অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনি বা বৃক্কের ওপরেও চাপ ফেলে। কারণ নাইট্রোজেন বিপাক করতে গিয়ে যে অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন হয়, সেটা মূত্রের মাধ্যমেই দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
আর উপরের দুই পদ্ধতির জন্যই দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে বলেন জানান, ক্রিস্টিনা।
অতিরিক্ত চিনি
সোডিয়াম ও প্রোটিনের মতো, চিনিও একইভাবে দেহে পানির অভাব তৈরি করে। রক্তে চিনি পরিমাণ বেড়ে গেলে, একই পদ্ধতিতে কোষ থেকে পানি এনে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে দেহ। আর বৃক্ক ছাঁকনি হিসেবে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়াতে থাকে। ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে, যেখান থেকে দেখা দেয় পানিশূন্যতা।
অন্যান্য উপাদান
খনিজ উপাদানের মধ্যে পটাসিয়াম প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়। এছাড়া কৃত্রিম চিনিতে থাকা উপাদান থেকে অনেক সময় ডায়রিয়া হতে পারে; যা কিনা পানিশূন্যতা হওয়ার অন্যতম কারণ।
যেসব খাবার দেহে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার: আলুর চিপস, হিমায়ীত খাবার, ফাস্ট ফুড বা পছন্দের চকলেট বা ক্যান্ডি- এসব অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে পানির অভাব তৈরি করার প্রধান দুই উপাদান সোডিয়াম ও আলাদা করে চিনি যুক্ত করা থাকে। আর এই উপাদানগুলোর কারণে খাবারগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু হয় তেমনি দেহে পানিশূন্যতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।
তৈরি মাংস: সসেজ, কোল্ড মিট-সহ এই ধরনের যত ‘রেডি টু ইট’ ধরনের মাংস আছে সবগুলোই দেহে পানির অভাব তৈরি করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ব্যাপারে সাবধান করে জানিয়েছে, এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। আর এই খনিজ উপাদান কীভাবে দেহে পানিশূন্যতার সমস্যা তৈরি করে সেটা আগেই বলা হয়েছে।
তাই রেস্তোরাঁয় কিংবা ঘরে প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিবর্তে সাধারণভাবে প্রস্তুত করা মাংসের পদ বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আচার: স্বাভাবিকভাবেই আচারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়। আর লবণ যে সোডিয়ামের উৎস, সেটা পানিশূন্যতা তৈরি করে। তাই বাসার তৈরি আচার হোক কিংবা বাজার থেকে কিনে আনা আচার- লবণের পরিমাণের দিকে নজর দিতে হবে।
সয়া সস: এই সসে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। যা দেহে পানির অভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
মিষ্টান্ন: প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবারের মধ্যে আছে- বিস্কুট, কেক, আইসক্রিম এবং আরও মিষ্টিজাতীয় খাবার যা দেহে পানিশূন্যতা তৈরি করে। কারণ অতিরিক্ত চিনি যে দেহে থেকে পানি বের করে দেওয়ার পরিমাণ বাড়ায় তা আগেই বলা হয়েছে।
বিট: বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর হলেও এই সবজিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে ভূমিকা রাখে। এজন্য বিটের জুস পান করার পর টয়লেটে যাওয়ার পরিমাণ বাড়ে। আর যতবার প্রস্রাব হবে ততবাই শরীর পানি হারাবে।
এসব খাবার উপভোগ করতে যা করা উচিত
এসব খাবার সবসময় খাওয়া হয় না। তাই খেলেই যে পানিশূন্যতায় ভুগতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
আরো পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ এড়াতে ৫ খাবারে লাগাম টানতে হবে
ক্রিস্টিনা পরামর্শ দেন, “অতিরিক্ত গরম আর ঘাম হলে এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই হবে ভালো। তবে মাঝেমধ্যে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতেই পারে। আর পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাসটা জরুরি।”
আর পানিশূন্য হওয়া আগে পিপাসার মাধ্যমে দেহ জানান দেবে যে পানি প্রয়োজন। তখন অবশ্যই পানি পান করতে হবে।
এম এইচ ডি/