শুক্রবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলে কি লাভবান হবে শিক্ষার্থীরা?

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:২৭ পূর্বাহ্ন, ২৩শে আগস্ট ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

কথায় আছে— ছাত্রজীবন খুবই মধুর, যদি না থাকত পরীক্ষা। পরীক্ষার নাম শুনলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হৃৎস্পন্দন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু পরীক্ষা হলো মেধা যাচাই করার একমাত্র মাধ্যম। তাই পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন একদম সম্ভব নয়। পরীক্ষাই হলো নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ।

এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল সাড়ে ১৪ লাখের মতো। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০শে জুন। সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে বার বার পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথমে ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয়। শিক্ষার্থীদের দাবির কারণে প্রথমে সূচি স্থগিত করে আরো দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেয় এবং বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সরকার পুরো পরীক্ষাই বাতিল করে দেয়।

স্থগিত পরীক্ষাগুলো এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ম্যাপিং করে নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার সময়ও একবার এইচএসসির পরীক্ষা এসএসসির বিষয় ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। সেটা ছিল সম্পূর্ণ একটি আলাদা প্রেক্ষাপট। সে সময় এসএসসি ও জেএসসির ফলাফল ম্যাপিং করে রেজাল্ট দেয়া হয়েছিল। পরের বছরও কয়েকটি পরীক্ষা আংশিক নিয়ে বাকি বিষয়গুলো একইভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। এবার যারা এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের এসএসসি পরীক্ষা একইভাবে ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হয়েছিল।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের কারণে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাবিদগণ, এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারাও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও বলেছেন, পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়।

যেসব শিক্ষার্থী বাতিলের আন্দোলন করেছিলেন তাদের যুক্তি হলো, কোটা আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে আছে। এ অবস্থায় তারা পরীক্ষা দিতে চান না। অন্যদিকে নটরডেম কলেজের সাধারণ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, এইচএসসির ফলাফল শুধু এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত। তারা পরীক্ষার পক্ষে। তারা বলেছেন, শুধু আহত (ছাত্র আন্দোলনে আহত) শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের বিষয়টা ম্যাপিং বা অটোপাস করা যেতে পারে। দেশের অধিকাংশ ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবকদের মতামত পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে।

সারা দেশে ১৪ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী আছে। সরকার আরো সময় নিয়ে শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো। কারণ এর ফল ভুগতে হবে শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত মোটেও যৌক্তিক হয়নি। পরীক্ষা দিলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পরবর্তী যে কোনো প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত থাকতো। বিশেষ করে সামনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এবং পরবর্তী জীবনে চাকরির পরীক্ষা। ফলে এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা দেশের জাতীয় জীবনেও প্রভাব ফেলবে।
 
আই.কে.জে/

এইচএসসি পরীক্ষা

খবরটি শেয়ার করুন