ছবি: সংগৃহীত
সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়াতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েননি, দুনিয়ায় এমন মানুষ বোধহয় পাওয়া মুশকিল। মানুষের খাদ্যের তালিকায় ডিম অতি পুরোনো একটি উপাদান হলেও সবাইকে কমবেশি এর খোসা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।
সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে দু'টি সমস্যা খুবই সাধারণ। একটি হলো, খোসার সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ লেগে থাকা; অন্যটি হলো, খোসা ছাড়ানোর পরও ডিমের ওপর পাতলা আবরণ লেগে থাকা। ইন্টারনেটে এসব সমস্যা সমাধানের নানা ‘হ্যাক’ বা কৌশল পাওয়া যায়। ডিমের খোসা ছাড়ানো কঠিন হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে এবং এর থেকে বাঁচার উপায়ও আছে।
'দ্য কনভারসেশনে' ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন কুইন্সল্যান্ডের খাদ্যবিজ্ঞানের অধ্যাপক পৌলমি বৌরি লিখেছেন, ডিমের খোসা শক্ত ও ছিদ্রযুক্ত। এর ভেতরে থাকে একটি ভেতরের ও বাইরের মেমব্রেন বা পাতলা পর্দা। এরপর থাকে ডিমের সাদা অংশ (অ্যালবুমিন)। একেবারে কেন্দ্রে থাকে মেমব্রেনে মোড়া কুসুম। বাইরের খোসা ও ভেতরের মেমব্রেনের মাঝে একটি বায়ুকোষ থাকে।
ডিম সেদ্ধ করার পর খোসা ছাড়ানো কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে ১৯৬০-১৯৭০-এর দশকে অনেক গবেষণা হয়েছে। এর একটি কারণ হলো, ডিমের সাদা অংশের পিএইচ মান বা ডিমে অ্যাসিড বা ক্ষারের পরিমাণ। ১৯৬০-এর দশকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের সাদা অংশের পিএইচ ৮ দশমিক ৭ থেকে ৮ দশমিক ৯ হলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়। এটি বেশ ক্ষারীয় মান।
ডিম কীভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তার ওপরও এটি নির্ভর করে। ১৯৬৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ডিম রাখলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়। ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ফ্রিজের ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে তেমন সুবিধা হয় না। তবে বেশি তাপমাত্রায় ডিম রাখলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম সেদ্ধ করার আগে যত বেশি সময় ধরে রাখা হয়, অর্থাৎ ডিম যত পুরোনো হয়, খোসা ছাড়ানো তত সহজ হয়। টাটকা ডিমের খোসা ছাড়ানো কঠিন—এটা অনেকে জানেন। প্রথমত, টাটকা ডিমে বায়ুকোষ ছোট থাকে। ডিম পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিদ্রযুক্ত খোসা দিয়ে খুব ধীরে ধীরে জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়। এতে বায়ুকোষ বড় হয় এবং ডিমের বাকি অংশ কিছুটা সংকুচিত হয়। বায়ুকোষ বড় হলে খোসা ছাড়ানো শুরু করা সহজ হয়।
দ্বিতীয়ত, ডিমের সাদা অংশ এমনিতেই কিছুটা ক্ষারীয় হয়। তবে ডিম পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পিএইচ মান বাড়ে। এতেও খোসা ছাড়ানো সহজ হয়।
অভিজ্ঞ রাঁধুনিরা মনে করেন, প্রথমে ফুটন্ত পানিতে ডিম দিয়ে আঁচ কমিয়ে অল্প আঁচে সেদ্ধ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ডিম ফাটানো এড়াতে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকা ডিম ব্যবহার করা উচিত। হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তনে ডিম ফেটে যেতে পারে। এ পদ্ধতির কারণ হলো, শুরু থেকে বেশি তাপমাত্রায় থাকলে ডিমের মেমব্রেন খোসা ও সাদা অংশ থেকে সহজে আলাদা হয়ে যায়।
এ ছাড়া দ্রুত বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলে ডিমের সাদা অংশের প্রোটিনগুলো সহজে বিকৃত হয়ে (গঠন পরিবর্তিত হয়ে) নিজেদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে। মেমব্রেনের সঙ্গে তাদের বন্ধন কম হয়। ডিম সেদ্ধ করার পর (নরম কুসুমের জন্য ৩-৫ মিনিট, জেলি কুসুমের জন্য ৬-৭ মিনিট এবং শক্ত কুসুমের জন্য ১২-১৫ মিনিট) বরফপানিতে ডুবিয়ে ঠান্ডা করে নিতে পারেন। এতে ডিমের সাদা অংশ খোসা থেকে কিছুটা সংকুচিত হয়, ফলে খোসা ছাড়ানো সহজ হয়।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন