বৃহস্পতিবার, ২৪শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া *** ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে রিটার্ন লাগবে না *** ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইসিকে চিঠি *** বাংলাদেশ ব্যাংকে নারীদের শর্ট স্লিভ ড্রেস ও লেগিংস নিষেধ, পরতে হবে শালীন পোশাক-হিজাব *** সচিবালয়ে ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা *** জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিলেন বিশ্ব আদালত *** প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিমানবাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ *** এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা একই দিনে হচ্ছে না, নতুন রুটিন প্রকাশ *** বাগমারা বিদ্যালয়ের নাম বদল, নতুন নাম শহীদ জিয়া বিদ্যালয় *** মতপার্থক্য থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য আরও দৃশ্যমান করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

চড়ুই পাখি যে কারণে 'যৌনশক্তি বাড়ানোর ওষুধের' শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:১৩ অপরাহ্ন, ৪ঠা জুলাই ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

চড়ুই পাখি সম্পর্কে দেশে একটা 'ধারণা' প্রচলিত আছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ চড়ুইয়েরা একইসঙ্গে কয়েকবার যৌন মিলন করে। স্ত্রী চড়ুইদেরও দুই-তিন বার যৌন মিলনে 'তৃপ্তি' আসে না, কয়েকবার 'সঙ্গম' করতে হয়। পাখি প্রজাতিতে সবচেয়ে বেশি যৌনশক্তির অধিকারী চড়ুই। এদের মাংস খেলে পুরুষের যৌনশক্তি বাড়ে। একইসঙ্গে একাধিকবার সঙ্গীর সঙ্গে সেক্স করতে পারেন পুরুষরা। দেশজুড়ে, বিশেষ করে অসচেতন পুরুষশ্রেণির মধ্যে চুড়ুই নিয়ে এমন ভ্রান্ত ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তারা নিজের যৌনশক্তি বাড়াতে নানাভাবে শিকার করে চড়ুইয়ের মাংস খাচ্ছেন। এতে কমছে চড়ুইয়ের সংখ্যা।

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজননের সময় পুরুষ চড়ুইকে যৌন সঙ্গমের জন্য বারবার স্ত্রী চড়ুইয়ের ওপরে উঠতে দেখা যায় বলে কিছু অসচেতন মানুষের ধারণা এমন যে, পুরুষ চড়ুইটির যৌন ক্ষমতা অনেক। তাই এর মাংস খেলে উপকার পাওয়া যাবে। আসলে এসব ধারণা পুরোপুরি ভুল। পুরুষ চড়ুইয়ের এমন ঘন ঘন আচরণের একমাত্র কারণ, সে যৌনকর্মে অদক্ষ। চড়ুই ছোট প্রাণী বলে তাদের শরীরের যৌনতার স্থানে ছোট ছিদ্র অবস্থিত। তাই পুরুষটিকে ওই ছিদ্রে লক্ষ্য স্থাপনের জন্য বহুবার বহু সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। প্রকৃতিগতভাবেই এরা এমন।

অর্থাৎ, স্ত্রী চড়ুইয়ের যৌনাঙ্গের ছিদ্র খুব ছোট। পুরুষ চড়ুইয়ের যৌনাঙ্গের আকারও তুলনায় বড় নয়। ফলে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষ চড়ুইটিকে যৌনাঙ্গ প্রবেশ করাতে বারবার চেষ্টা করতে হয়। বিষয়টি কেন্দ্র করে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে, চড়ুইয়ের যৌনশক্তি বেশি। বিষয়টি আরো প্রতিষ্ঠিত করেছেন একশ্রেণির কবিরাজ ও 'বনজ ওষুধ' বিক্রেতা। অথচ বিষয়টির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। চড়ুইয়ের মাংসের সঙ্গে মানুষের যৌনশক্তি বাড়বার কোনো সম্পর্ক নেই। পাখিটির মাংসে মুরগিসহ অন্যান্য পাখির মাংসের মতোই উপাদান আছে। এতে মানুষের যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর উপাদান নেই বলে অভিজ্ঞদের অভিমত। অথচ এ ধারণার ফলে মরতে হচ্ছে চড়ুই পাখিদের।

যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী সুখবর ডটকমকে জানান, 'আমার কাছে যৌনরোগে আক্রান্ত এমন অনেক রোগী আসেন, যারা রোগটির চিকিৎসা হিসেবে চড়ুইয়ের মাংস খান। কিন্তু এতে তারা কোনো উপকৃত হন না। কোনো কোনো শিক্ষিত পুরুষেরও ধারণা, চড়ুইয়ের মাংস খেলে যৌন মিলনের সময় পুরুষাঙ্গ বেশি উত্তেজিত ও শক্ত হয়। এগুলো ভুল বিশ্বাস। ছোট হলেও চড়ুই তো আস্ত একটা প্রাণ। প্রকৃতির কোলে এদেরও আছে সমানাধিকার। আর মানুষ যৌনসহ যে কোনো রোগে আক্রান্ত হতেই পারেন। এর বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসাও আছে। কথিত যৌনশক্তি বাড়াতে চড়ুই নিধন বন্ধে প্রশাসনের তাই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।'

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আমাদের নির্বিচারে চড়ুই হত্যার পরিণামে ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। যেমনটা ভোগ করেছিল চীন। চড়ুই ফসলের ক্ষতি করে, এ ভ্রান্ত ধারণায় গত শতকের ৫০-এর দশকে মাও সে তুংয়ের নির্দেশে লাখ লাখ চড়ুই নিধন করা হয়। কিন্তু এর চার–পাঁচ বছরের মাথায় চড়ুইয়ের অভাবে শস্যক্ষেত্রে পোকামাকড়ের বিধ্বংসী আক্রমণে খাদ্যসংকটের কবলে পড়ে চীন। দুর্ভিক্ষে মারা যান অন্তত ২০ মিলিয়ন মানুষ। এরপর আবার চীনে শুরু করতে হয় চড়ুই রক্ষার আন্দোলন। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিভিন্ন দেশে নানা কারণে কমছে নিরীহ প্রাণ চড়ুইয়ের সংখ্যা।

পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'নানা দেশের গণনা থেকে জানা গিয়েছে যে, গত ১২ বছরে চড়ুইয়ের সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ব্রিটেনের কথাই ধরা যাক। সত্তর দশকের প্রথম দিকে সে দেশে চড়ুইয়ের সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষের মতো। গত চল্লিশ বছরে শুধু ব্রিটেনেই এ পাখির সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ইউরোপের অন্য দেশেও এরা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। খোদ ভারতে চড়ুই পাখির সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে।'

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, 'একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, কুড়ি বছর আগেও বেঙ্গালুরুতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ২৫,০০০ চড়ুই দেখা যেত। বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে পঞ্চাশটির মতো। পাখিটির সংখ্যা কেন দ্রুত কমছে, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এদের রক্ষা করার জন্য কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই।'

চড়ুই সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ও এদের বিলুপ্তি রুখতে যৌথ উদ্যোগ নেয় নেচার ফরএভার সোসাইটি অব ইন্ডিয়া ও ফ্রান্সের ইকো-সিস অ্যাকশন ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি, বিশ্বের বেশ কয়েকটি পরিবেশ সংস্থাও। ব্রিটেনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অব প্রোটেকশন অব বার্ডস’ লাল তালিকাভুক্ত করেছে চড়ুইকে। এ পাখির উৎপত্তিস্থল মধ্যপ্রাচ্য। কৃষিকাজের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে পাখিটিকে রক্ষার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চড়ুই পাখি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন