ব্রিটেনে বিবিসির প্রধান কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনায় পক্ষপাতের অভিযোগে বিবিসির বোর্ড সদস্য রবি গিবকে অপসারণের দাবি উঠেছে। তার অপসারণ চেয়ে বিবিসি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন ৪০০-এর বেশি তারকা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন মিরিয়াম মার্গোলাইস, অ্যালেক্সি সেইল, জুলিয়েট স্টিভেনসন, মাইক লেই, জাউ অ্যাশটন, খালিদ আবদাল্লা, শোলা মোস-শগবামি এবং ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল। বিবিসির ১১২ জন সাংবাদিকও এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তবে ‘প্রতিশোধের শিকার’ হতে পারেন, এ ভয়ে বিবিসির সাংবাদিকরা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বেনামে।
চিঠিতে ইসরায়েল/ফিলিস্তিন বিষয়ে বিবিসির সংবাদ পরিবেশনায় ‘অস্বচ্ছ সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত এবং সেন্সরশিপ’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে, বিবিসির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নির্মিত ‘গাজা: চিকিৎসকদের ওপর হামলা’ (Gaza: Doctors Under Attack) তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার না করার সিদ্ধান্তকে ‘ভয় বা পক্ষপাতিত্ব’ ছাড়াই সংবাদ পরিবেশনের নীতির পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবিসি এ তথ্যচিত্রটি প্রচার না করার কারণ হিসেবে ‘পক্ষপাতিত্বের ধারণা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি’-র কথা বলেছে।
স্বাক্ষরকারীরা অভিযোগ করেছেন, বিবিসি ইসরায়েলি সরকারের সমালোচক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ভয়ে হাত-পা গুটিয়ে আছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, রবি গিবের মতো একজন ব্যক্তি, যার ‘দ্য জুইশ ক্রনিকল’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তিনি কীভাবে বিবিসির সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তে, বিশেষ করে সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে প্রভাব ফেলছেন?
উল্লেখ্য, রবি গিব ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে-এর প্রেস সচিব ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি দ্য জুইশ ক্রনিকল কিনে নেওয়া কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্ব দেন।
দ্য জুইশ ক্রনিকল বিশ্বের প্রাচীনতম ইহুদি সংবাদপত্র। লন্ডন-ভিত্তিক এ সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড্যানিয়েল শোয়ামেন্থাল। ২০২০ সালের এপ্রিলে এটি স্বেচ্ছা অবসায়নে চলে যায় এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং ব্যাংকারদের একটি বেসরকারি কনসোর্টিয়াম এটি অধিগ্রহণ করে।
২০২৪ সালে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সংবাদপত্রের কিছু বিশিষ্ট সাংবাদিক পত্রিকার কথিত ‘অজানা মালিকানা ব্যবস্থা’ এবং ‘বানোয়াট’ গল্প প্রকাশের অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে, বিবিসির অভ্যন্তরীণ কর্মীদের একটি গ্রুপের উদ্যোগে দেওয়া এ চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের অনেক প্রচেষ্টা বিবিসির ঊর্ধ্বতন স্তরে আলোচনা বা ব্যাখ্যা ছাড়াই নেওয়া অস্বচ্ছ সিদ্ধান্তের দ্বারা ব্যাহত হয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বর্বরতায় ব্রিটেন সরকারের জড়িত থাকার বিষয়ে বিবিসি কোনো উল্লেখযোগ্য বিশ্লেষণ প্রকাশ করেনি, এমনকি অস্ত্র বিক্রি বা এর আইনি প্রভাব সম্পর্কেও কোনো খবর দেয়নি। এসব খবর বিবিসির প্রতিযোগী সংবাদমাধ্যমগুলো ঠিকই প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে জার্মানি ভিত্তিক ডয়েচ ভেলের পর বিবিসির বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া গ্লাসটনবারি ফেস্টিভ্যালে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান সংবলিত র্যাপ গান সরাসরি সম্প্রচার করে ইসরায়েলপন্থীদের তোপের মুখে পড়ে বিবিসি। সব মিলিয়ে গাজা-ইসরায়েল সংঘাতকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষেরই রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমটিকে।
খবরটি শেয়ার করুন