শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজম খান অমরত্ব লাভ করেছেন কালজয়ী গানের মধ্য দিয়ে

বিনোদন ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৪১ অপরাহ্ন, ৫ই জুন ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মাদ মাহবুবুল হক খান আজম- হ্যাঁ, এটিই তার পুরো নাম। কিন্তু সারাদেশের মানুষ, এমনকি বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা অগণিত ভক্ত, অনুরাগীর কাছে সে আজম খান নামেই পরিচিত; যাকে প্রথম শ্রোতারা ‘গুরু’ বলে সম্বোধন করা শুরু করেছিল। 

ব্যান্ড সংগীতের অগ্রপথিক ‘পপগুরু’খ্যাত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আজম খানের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। অমর এই শিল্পীর সংগীতযাত্রা ও ব্যক্তিজীবনের ঘটনাবহুল অধ্যায় নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তাঁর সহযোদ্ধা, কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ।

‘আজম খান দেশসেরা রকস্টার’–এমন কথাও লোক মুখে অনেক শুনেছি। অথচ আজম খান নিজেও হয়তো জানত না সে কত বড় মাপের শিল্পী। নইলে যে মানুষটিকে নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়, সে অহমবর্জিত জীবন কাটাতে পারত না। সংজ্ঞা যেটিই হোক, বড় মাপের মানুষ হয়তো এমনই; যারা জনপ্রিয়তাকে উপভোগ করে, কিন্তু তা নিয়ে অহঙ্কার করে না। আজম খান কতটা সাদা মনের মানুষ ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না। সবার মাঝে সহজেই মিশে যেতে পারত, অনায়াসে আপন করে নিতে পারত সবাইকে–এমন গুণ ক’জনের আছে সেটাই ভাবার বিষয়। ভাবতে ভালো লাগে, এমন একজন মানুষ ছিল আমার পরম বন্ধু। আবার কষ্ট লাগে এটা ভেবে যে, আজম খানের মতো উদারমনা বন্ধুটি আজ আমাদের মাঝে নেই। সে চলে গেছে না ফেরার দেশে, রেখে গেছে অজস্র স্মৃতি। সেসব স্মৃতি ক্ষণে ক্ষণে মনের পর্দায় চলচ্চিত্রের মতোই ভেসে ওঠে। 

আরো পড়ুন: সৃষ্টি বিশ্বময়-এর আয়োজনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতসন্ধ্যা বৃহস্পতিবার

আজম খানকে সঙ্গী করে গানের ভুবনে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি। সাক্ষী হয়েছি বহু ঘটনার; যা সত্যি ভুলে থাকা কঠিন। এই যেমন আজ হঠাৎ মনে পড়ে গেল, ১৯৭৩ সালের দিনগুলোর কথা। সে বছরই ইশতিয়াক, ল্যারি, ইদুসহ বেশ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটি গানের দল গড়েছিলাম। আমরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তখন শুধু ইংরেজি গান করতাম। তারপরও বাংলা গান গাওয়ার একটা তাগিদ ছিল। সেটি জেনেই আমাদের আরেক বন্ধু শিল্পী ফিরোজ সাঁই একদিন এসে আমাকে জানায়, তার পরিচিত একটি ছেলে আছে, নাম আজম খান। ভালো গায়। তাকে নিয়ে বাংলা গান করা যেতে পারে। কিন্তু দলের অন্যরা বাংলা গান গাওয়ার পক্ষে ছিল না। তার পরও আমি ফিরোজ সাঁইকে বলি, আজম খানের সঙ্গে দেখা করার কথা। এরপর ফিরোজ সাঁইয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় আজম খানের সঙ্গে। পরিচয়ের প্রথম দিনেই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে যায়। তার গায়কীও আমাকে মুগ্ধ করে। তাই গান রেকর্ড করারও পরিকল্পনা শুরু করি। বন্ধু শামীম ও রুমির সঙ্গে আড়াইশ টাকা দিয়ে ইন্দিরা রোডের ঢাকা রেকর্ডিং স্টুডিওতে শিফট ভাড়া করি। এরপর আজম খান ও আমি দু’জনে মিলে রেকর্ড করি চারটি গান। আজম খানের তুমুল জনপ্রিয় দুই গান ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ ও ‘হাইকোর্টের মাজারে’ সেদিন রেকর্ড করা হয়েছিল। আমি রেকর্ড করেছিলাম ‘চাঁদ জাগে তারা জাগে’ ও ‘দুনিয়াটা কত মজার’ গান দুটি। 

এই গানগুলো শোনার পর স্টুডিওর মালিকের এতটাই ভালো লেগেছিল যে, তিনি আমাদের গান রেকর্ড আকারে প্রকাশ করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর কথা রাখতেও খুব একটা দেরি করেননি। প্রথমে আজম খানের দুটি গান রেকর্ড আকারে প্রকাশ করা হয়। আর প্রকাশের পরপরই গান দুটি দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। জনপ্রিয়তার সেই রেশ ধরেই একসময় আমরা গড়ে তুলি বাংলা পপ গানের ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’। এরপর উচ্চারণের সঙ্গে শুরু হয় নতুন করে পথচলা। যে পথ পাড়ি দিতে গিয়েই আজম খান হয়ে উঠেছে তার কালের অনন্য এক শিল্পী। ব্যান্ডের জগতে পেয়েছে গুরুখ্যাতি। তার সময়কে জয় করে জায়গা করে নিয়েছে কিংবদন্তিদের কাতারে। তাই আজম খান চলে গেলেও অমরত্ব লাভ করেছে তার কালজয়ী গানের মধ্য দিয়ে।

এসি/



আজম খান কালজয়ী গান

খবরটি শেয়ার করুন