ছবি: সংগৃহীত
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশেষজ্ঞ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কাছে প্রশ্ন ছিল- 'বাংলাদেশের একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে বর্তমানে আপনি কতটা নিরাপদ বোধ করেন?' এর উত্তরে তিনি বলেছেন, 'হয়তো আমি এর জন্য সেরা উদাহরণ নই। আমি দুইবার ভারতে শরণার্থী হয়েছিলাম। প্রথমবার, ১৯৬০–এর দশকের দাঙ্গার পর—১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। কিন্তু আমার বাবা–মা কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। আমি ফিরে এসেছি, আমার মাতৃভূমিতে বিনিয়োগ করেছি এবং এখানেই আমার জীবন গড়েছি।'
তিনি বলেন, 'আমি আমার দেশের জন্য অবদান রাখতে গিয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদ ছেড়ে দিয়েছি। আমার পরিবারের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার মা শেখ হাসিনার দলের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন এবং আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু এ ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো আমার পেশাদারি এবং তথ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে না।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'ব্যক্তিগতভাবে, আমি বাংলাদেশে থাকার ঝুঁকিগুলো মেনে নিয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি যে, পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি যেখানে একটি ভূমিকা রাখে, এমন যে কোনো দেশের যে কোনো নাগরিকের জন্যই এ ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান।'
তিনি বলেন, 'আমি আরও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের—হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর—সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তির প্রতি এ অঙ্গীকারই জাতি গঠনের মূল ভিত্তি।'
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ঢাকাভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সঙ্গে যুক্ত। তার কাছে আরো প্রশ্ন ছিল- 'ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি পার্লামেন্টকে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজার ৪০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং ২০২৫ সালে (এখন পর্যন্ত) ৭২টি ঘটনা ঘটেছে। আপনি কি বলবেন এ পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত?'
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'এ ধরনের ঘটনা গণনার একাধিক উপায় আছে। কেউ অস্বীকার করে না যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) বিদায়ের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। পুলিশবাহিনী বিপর্যস্ত ছিল। কিছু সময়ের জন্য নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর হাতে চলে গিয়েছিল, তবে পরিস্থিতি অস্থির ছিল।'
তিনি মনে করেন, 'বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ঐতিহাসিকভাবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। সুতরাং, কিছু ক্ষেত্রে, কোনো হিন্দু ব্যক্তির ওপর হামলা তার ধর্মের কারণে ছিল, নাকি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমর্থক হওয়ার কারণে ছিল, তা আলাদা করা কঠিন।' ভারতীয় প্রচারমাধ্যম ফ্রন্টলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আরেকটি দিক বিবেচনা করার আছে। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন হিন্দু ও বৌদ্ধরা—ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। একইভাবে, ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন মুসলমানরা—বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং, ভারত যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে হওয়া আচরণ নিয়ে মন্তব্য করে, তখন দেশটিকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তার নিজের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী আচরণ হচ্ছে, সেটাও অন্যরা খতিয়ে দেখছেন।'
এইচ.এস/