ছবি: সংগৃহীত
ভারতের বর্ষীয়ান ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব মনে করেন, ‘মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসন ধর্মনিরপেক্ষ (সেক্যুলার) ছিল।’ আওরঙ্গজেবের শাসনকালকে 'সেকুলার' বলেই তিনি দাবি করেন। সম্প্রতি বিবিসি হিন্দিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
৯৪ বছর বয়সী বরেণ্য এ ইতিহাসবিদ বলেন, ‘ওই জমানা অন্য রকমের ছিল। তবে এটাও ঠিক, শিবাজি তার লেখা এক বিখ্যাত চিঠিতে আওরঙ্গজেবকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তিনিও যেন আকবরের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে অনুসরণ করেন।’
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ধর্মের একটা নিজস্ব জায়গা তখনও ছিল। তবু আমি বলবো, আওরঙ্গজবের ওই শাসনকে আজকের ভাষায় সেক্যুলারই বলা চলে।’
অনেক বছর ধরে ভারতে বসবাসকারী ফরাসি সাংবাদিক, গবেষক ও লেখক ফ্রাঁসোয়া গঁতিয়ের সঙ্গে বিবিসি বাংলা সম্প্রতি যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইরফান হাবিব বা রোমিলা থাপারের মতো বামপন্থী ঐতিহাসিকরা সত্যের অপলাপ করে আওরঙ্গজেবের মতো শাসকের কুকীর্তিকে দশকের পর দশক ধরে আড়াল করে গেছেন এবং তাকে শিল্পদরদী, উদার ও ধর্মভীরু বলে তুলে ধরতে চেয়েছেন।’
বিবিসি বাংলাকে গঁতিয়ে বলেন, ‘সত্যিকারের ইতিহাস জানলে আজ হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি নষ্ট হবে, এর চেয়ে বাজে কথা আর কিছু হতে পারে না। আমি বলবো, নিজের দেশের অতীতের ভালো ও মন্দ, চরম খারাপ ও চরম শুদ্ধ কোনটা, সেটা না জানলে একটা জাতি এগোতে পারে না।’
নিজের দেশ ফ্রান্সের উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, ‘উত্তর আফ্রিকায় ফরাসি উপনিবেশ স্থাপনের সময় কী ধরনের বর্বর কর্মকাণ্ড হয়েছিল, বা নাৎসি আমলে ফরাসি ইহুদিদের কীভাবে তাদের হাতে তুলে দিয়ে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল– ফ্রান্স আজ তা নিয়ে খোলাখুলি কথাবার্তা বলতে পারে এবং সেই লজ্জার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ারও চেষ্টা করে।’
তিনি মনে করেন, ‘আওরঙ্গজেবের চেয়ে হিন্দুবিদ্বেষী শাসক ভারতে আর কখনও কোনো কালে আসেননি। আজকের ভারতীয় মুসলমানদের ৯০ শতাংশের পূর্বপুরুষকে তার আমলেই জোর করে ধর্মান্তরিত করে হিন্দু থেকে মুসলিম বানানো হয়েছিল, এটাও তাদের কখনও জানতেই দেওয়া হয়নি!’
তার মতে, ‘পশ্চিমা বিশ্বে যেমন হিটলার, তেমনি ভারতের হলেন আওরঙ্গজেব। সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বে আপনি হিটলারের নামে কোথাও কোনো রাস্তা পাবেন না, অথচ ভারতের রাজধানীতে এই সেদিনও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ছিল আওরঙ্গজেবের নামে। ভাবা যায়?’
উল্লেখ্য, সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতে সম্ভাজি মহারাজের মৃত্যু হয়। সম্ভাজির জীবন-কাহিনি নিয়ে সম্প্রতি এক হিন্দি সিনেমা তৈরি হয়েছে, ‘ছাভা’। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেই সিনেমা। তাতে আওরঙ্গজেবের চরিত্রায়ণ মহারাষ্ট্রের অনেক মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিকে ঘিরে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহর অশান্ত হয়ে উঠেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার (১৭ই মার্চ) রাতে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ পরিস্থিতির সূচনা হয় সম্ভাজি নগরকে কেন্দ্র করে। এ জেলার আগের নাম ছিল আওরঙ্গবাদ। বর্তমান নাম ছত্রপতি শিবাজির জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্ভাজির নামে, সম্ভাজি নগর। সেখানেই খুলদাবাদ এলাকায় রয়েছে আওরঙ্গজেবের সমাধি। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেই সমাধি সেখান থেকে সরানোর দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি সেই দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
বলিউডের সিনেমা 'ছাভা' বক্স অফিসে ঝড় তোলার পর আওরঙ্গজেবকে নিয়ে ভারতে নতুন করে যে তর্কবিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে এর মধ্যে কোনো অসুবিধা দেখেন না লেখক ফ্রাঁসোয়া গঁতিয়ে। তার মতে, ‘এটা একটা অত্যন্ত ইতিবাচক ও স্বাস্থ্যকর বিতর্ক!’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন