শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে লাভ ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছেন যে দোকানি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:০৪ অপরাহ্ন, ২২শে মার্চ ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

রমজানে কোনো লাভ ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ওমর ফারুক খান। তুলনামূলক কম দামে পণ্য কিনতে পেরে হাসি ফুটছে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মুখে।

মানবিক এমন উদ্যোগের কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর,  স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের সাধুবাদ পেয়েছেন তিনি। 

শুক্রবার (২২শে মার্চ) ওমর ফারুক খানের মালিকানাধীন আবদুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে কৃষক, শ্রমিকসহ গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে দোকানি তার দোকানের ১২টি পণ্য বিক্রি করছেন বিনা লাভে।

তার দোকানে রোজা উপলক্ষ্যে প্রতি কেজি ছোলা ১০১ টাকা, চিড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, চিনি ১৩৬ টাকা, আখের গুড় ১১১ টাকা, বেসন ৮৫ টাকা, মুড়ি ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, লাচ্ছা সেমাই ১২০ টাকা, খোলা সেমাই ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া কনডেন্স মিল্ক ও খেজুরও বিক্রি করছেন লাভ ছাড়াই। এসব পণ্যের মূল্যতালিকা তিনি তার দোকানে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। মূল্যতালিকা দেখে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ হাসিমুখে পণ্য ক্রয় করছেন।

আরো পড়ুন: যেখানে ৫৯০ টাকায় মিলছে গরুর মাংস

শহীদুল ইসলাম ফুটপাতে ফুচকাসহ মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন। তিনি এসেছেন আব্দুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে রমজানের জিনিসপত্র ক্রয় করতে। জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রমজান এলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে আমাদের মতো গরিব মানুষের অনেক কষ্ট হয়। সেখানে ওমর ফারুক ভাই রমজানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় ৫ থেকে ২০ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করছেন। তার দোকান থেকে আজ চিনি, ছোলা, তেল কিনেছি। রোজা রেখে দোয়া করি, তার মতো যদি অন্য ব্যবসায়ীরাও চিন্তা করতেন, তাহলে আমরা সুখ-শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।

ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, রমজান এলেই বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যসামগ্রী মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়। অন্যদিকে অন্যান্য দেশে এই সময় পণ্যের দাম কমে যায়। জয়নগর এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির। এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই ক্রয়মূল্যে রমজানের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছি। যে দামে আমার কেনা, সেই দামেই বিক্রি করছি। কম দামে পণ্য কিনতে পেরে মানুষ যখন হাসি দেয়, তখন আমার বুকটা আনন্দে নেচে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে একজন পোস্ট দিয়েছিল, এরপর থেকেই আমার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। দোয়া করবেন, আমি যেন পুরো রমজান মাস রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়মূল্যে বিক্রি করতে পেরে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারি।

জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. এস্কান্দার খান গণমাধ্যমকে বলেন, ওমর ফারুক সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়মূল্যেই বিক্রি করছে সে। ক্রয়মূল্যে বিক্রি করায় বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় তার দোকানের পণ্যের মূল্য অনেকটাই কম। এতে এলাকার সাধারণ ক্রেতারা আনন্দ সহকারে রমজানের পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে আমি সাধুবাদ জানাই।

জাতীয় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ওমর ফারুক নামে জয়নগর বাজারের এক ব্যবসায়ী ক্রয়মূল্যে রমজানের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করছে। আমরা তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। অন্য ব্যবসায়ীরা যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যেও পণ্য বিক্রি করে তাহলে সাধারণ মানুষ ঠিকভাবে পণ্য ক্রয় করতে পারবে।

দোকানি ওমর ফারুককে সাধুবাদ জানিয়েছেন শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সম্প্রতির সঙ্গে বসবাস করছে। রমজান মুসলমানদের পবিত্র একটি মাস। এই মাসে সকল ব্যবসায়ীদের ওমর ফারুকের মতো হওয়া উচিত। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে ধন্যবাদ  জানাই।

এইচআ/

রমজান মাস পণ্য বিক্রি শুভ উদ্যোগ

খবরটি শেয়ার করুন