ছবি: সংগৃহীত
যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, বা এ ধরনের কোনো কাজে উৎসাহ না পাওয়ার মতো উপসর্গ অনেকের মধ্যে হঠাৎ দেখা দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ কী, তা জানেন না অনেকে। পুরুষাঙ্গের উত্থান কেন আগের মতো হয় না আর যৌনসঙ্গীকে কেন তৃপ্তি দিতে পারেন না, এই নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন।
স্বাস্থ্য-বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা ও চিকিৎসকরা বলছেন, ‘এ ধরনের উপসর্গের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে- পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণী টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া। একে বলা হয়, টেস্টোস্টেরন ঘাটতি। এর অভাব হলে ও বিভিন্ন রোগজনিত কারণে প্রায় সময় পুরুষাঙ্গের আকার ছোট হয়ে যেতে পারে।’
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘মায়ের পেটে থাকার সময় একটা শিশু পুরুষ নাকি নারী হবে- তা টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে নির্ধারণ হয়। প্রজনন ও যৌন ক্ষমতা পুরোপুরিই এই হরমোনের উপর নির্ভরশীল।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষের মধ্যে পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়। এই হরমোন অণ্ডকোষে তৈরি হয়। এর প্রভাবেই একটা বিশেষ বয়সে গিয়ে, অর্থাৎ যৌবনের শুরুতে পুরুষাঙ্গের আকারে পরিবর্তন আসে। যৌন চাহিদার সৃষ্টি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের টুইন্সবার্গ ফ্যামিলি হেলথ এন্ড সার্জারি সেন্টারের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট কেভিন এম প্যান্টালোন বিবিসিকে জানান, ‘নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যেই টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকে। পুরুষের মধ্যে এই হরমোনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি থাকে। যার কারণে পুরুষের প্রজনন কার্যক্রম বিকাশ লাভ করে ও তার পুরুষাঙ্গ গঠিত হয়।’
আমেরিকান ইউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ‘স্বাভাবিক পুরুষদের জন্য কমপক্ষে ৩০০ ন্যানোগ্রাম পার ডেসিলিটার টেস্টোস্টেরন থাকা স্বাভাবিক। এর চেয়ে কম যদি কারো থাকে, তাহলে তার চিকিৎসা নেওয়া উচিত। এই হরমোনের ঘাটতির কারণে পুরুষের বন্ধ্যাত্বও দেখা দিতে পারে।’
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে লিবিডোর মাত্রা কমে যাবে এবং এর কারণে যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যাবে। এটা ব্যক্তি নিজে বা তার সঙ্গী বুঝতে পারবেন। পুরুষদের বিকৃত যৌন আচরণের অন্যতম কারণ টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি।’
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক অ্যাকাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, ‘কম টেস্টোস্টেরনের যেসব উপসর্গ থাকে, তার মধ্যে রয়েছে- যৌন তাড়না কমে যাওয়া, যৌনাঙ্গ উত্থানে অক্ষমতা, যৌন মিলনে অক্ষমতা, অণ্ডকোষ সঙ্কুচিত হওয়া ও শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যাওয়া।’
এছাড়া ‘বন্ধ্যাত্ব, ঘুমে সমস্যা, মনোযোগে সমস্যা, কাজে উৎসাহ না পাওয়া, মাংস পেশীর শক্তি কমে যাওয়া, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, পুরুষদের স্তন গঠিত হওয়া, বিষণ্ণতা, ক্লান্তি ও অবসাদ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।’
এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘৮৫-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের কোনো ধরনের ক্ষতি হলে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি দেখা দেয়।’
চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত গরমে দীর্ঘক্ষণ থাকলেও টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে যেতে পারে। কারণ, এই হরমোনের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে হলে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় এক থেকে দেড় ডিগ্রি কম রাখতে হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ যাদের বেশি বা যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
জীবনযাত্রায় কিছু অভ্যাস পরিবর্তন বা সংযোজন করে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়। এগুলো হচ্ছে- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যালকোহল পান ও মাদক থেকে দূরে থাকা। আবার হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির মাধ্যমেও ফিরে আসতে পারে যৌন চাহিদা।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন