ছবি: সংগৃহীত
বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান চলাকালে হত্যা মামলা দায়ের হলেও বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার বা আটক হতে হয়নি। কেন তিনি 'বেঁচে গেলেন', বা আটক ও গ্রেপ্তার হননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে, নিজেই এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ঢাকার সিনেমার নায়িকা নুসরাত ফারিয়া সম্প্রতি বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে প্রথমে আটক ও পরে গ্রেপ্তার এবং কারাভোগের আলোচনার রেশ ধরে মামুনুর রশীদ নিজে গ্রেপ্তার থেকে 'বেঁচে যাওয়ার' প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দেন।
গত বছরের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশের অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক, অভিনেত্রী-অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের ও কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আক্রোশের প্রকাশ ঘটছে। তবে শিল্পীদের প্রতি রাজনৈতিক দল জামায়াতের বিশেষ ক্ষোভ থাকার কারণ দেখছেন মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, 'শিল্পীদের ওপর ক্ষোভ থাকার কারণ আছে জামায়াতের। যখনই সুযোগ পায় (জামায়াত), তখনই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারণটা খুবই স্পর্শকাতর। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে শিল্প-সাহিত্যের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। বহু শতাব্দী ধরে বাংলা ভাষা, বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে মধ্যযুগ থেকেই লড়াইটা চলছে। ভাষা আন্দোলন থেকে সূচনা হলো একটা যুদ্ধই।'
তিনি বলেন, 'সেই যুদ্ধ একাত্তরে একটা রূপ পেল। চিত্রকলা, সংগীত, নাটক, নৃত্যকলা—সবকিছুর সঙ্গে বাঙালিত্বের বহুদিনের একটা গাঁটছড়া বাঁধা। দু-একজন অভিনেত্রী, গায়িকা, অভিনেতাকে অপমান করে কোনো লাভ হবে?'
দৈনিক আজকের পত্রিকায় লেখা এক উপসম্পাদকীয়তে মামুনুর রশীদ এসব কথা বলেন। 'বিলম্বিত শুভ বড় অশুভ হয়ে যায়' শিরোনামে তার এ কলাম গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়।
তিনি লেখেন, 'আমিও ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ রাতে ঢাকা বিমানবন্দর হয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য উপস্থিত হই। আমার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কিছুক্ষণ বিলম্ব করেন। আমি অবাক বিস্ময়ে অপেক্ষা করি। কারণ, ৫ই আগস্টের পর আমি দুইবার মুম্বাই ও একবার নেপালে যাই; মুম্বাই শুটিংয়ের কাজে আর নেপালে একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নিতে। কোথাও কোনো হয়রানির শিকার হতে হয়নি। যাহোক, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কিছুক্ষণ পর সসম্মানে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে দেন এবং যথাসময়েই আমি বিমানে আরোহণ করি।'
তিনি বলেন, 'আমি কিছুদিন যাবৎই অসুস্থ। ... ৩০ (এপ্রিল) তারিখের যাত্রায় দোহায় বিমান পরিবর্তন করে ওঠার পর থেকে শরীরটা আরও খারাপ অনুভূত হচ্ছিল। ... কাতার এয়ারলাইনসের ক্রুরা নানাভাবে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বহু কষ্টে ডালাস বিমানবন্দরে পৌঁছার পর দেখলাম এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ আমার জন্য অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে রেখেছে। সরাসরি চলে গেলাম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। ... হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ই সম্ভবত তৃতীয় দিন জানতে পারি, আমার নামেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে, একই সময়ের ঘটনা, গত জুলাইয়ের। সম্ভবত আমার মামলাটিও নুসরাত ফারিয়ার মামলার কাছাকাছি সময়ে করা।'
তিনি লেখেন, 'আমিও নুসরাতের মতো জুলাইতে দেশের বাইরে ছিলাম। পাসপোর্টের অ্যারাইভাল ও ডিপারচার সিল তার সাক্ষ্য দেবে। এ মামলায় আমার সঙ্গে আবার চঞ্চল চৌধুরী ও রিয়াজকে (দুজনই অভিনেতা) আসামি করা হয়েছে। যদি মামলাটি ৩০ তারিখেই হত এবং বিমানবন্দরে কাগজ চলে আসত, তাহলে নুসরাতের মতো আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়ে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখে দিত। এবং যেখানে আইসিইউ প্রয়োজন, সেখানে হাজতনিবাসেই আমার হয়তো বিচারটি হয়ে যেত।'
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন